শিক্ষাজীবন শেষে অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকরীর আবেদন করে থাকে। চাকরির জন্য সেরা আবেদনকারী বাছাই করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ভাইভা বোর্ড বা ইন্টারভিউ। যদিও ইন্টারভিউ বোর্ডে বসার আগে প্রার্থীকে প্রথমে লিখিত পরিক্ষায় কয়েক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। লিখিত পরিক্ষায় সফল প্রার্থীরা সবশেষে ভাইভাতে অংশগ্রহণ করে।
আমাদের অধিকাংশ শিক্ষাব্যবস্থায় ভাইভা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় এর উপর কোন প্রশিক্ষণ অথবা কোর্স করায় না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে এর চর্চা আছে, তথাপি এটা পর্যাপ্ত নয়। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষে একটা বড় সময় ধরে চাকরির ভাইভাতে সফল হতে পারে না।
চাকরির ভাইভা বোর্ডে ভালো করার কিছু কৌশল
মূলত ইন্টারভিউ বোর্ডের সফলতা এবং ব্যর্থতায় আপনার ভাগ্য বদলে দিতে পারে। সঠিক পন্থা অনুসরণ না করে অনেক যোগ্য এবং উচ্চ সিজিপি ধারী প্রার্থী ভাইভাতে গিয়ে আঁটকে যায়। এইজন্য ভাইভা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা প্রার্থীকে অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে। আজকে আমাদের আলোচনার মূল কথাই হচ্ছে ইন্টারভিউ বোর্ডে ভালো করার উপায় বা কৌশল। চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পূর্বে করণীয়
১. ভালো প্রস্তুতি থাকা: দেখুন, যেহেতু ভাইভা বোর্ড ফেস করবেন, অবশ্যই আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যথেষ্ট জানা লাগবে। এছাড়া আপনার পঠিত বিষয়াবলী, সাম্প্রতিক ঘটনবহুল, আলোচিত সাল, এবং ইন্টারভিউ দিনের সকালের পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম ইত্যাদি মুখস্ত রাখবেন। আপনার নামের সাথে মিল আছে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা রাখুন। অবশ্যই আপনার নিজ জেলার যাবতীয় তথ্য বিশেষ করে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্থান, মুক্তিযোদ্ধা, জেলার শিক্ষার হার, আয়তন ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে জেনে যাবেন।
২. উপযুক্ত পোশাক পরা: যদিও ভাইভার জন্য কোন নির্দিষ্ট ড্রেসে কোড নেই, তবুই যেসব পোশাকগুলোকে আমরা ফরমাল হিসেবে দেখি সেগুলো পরিধান করতে হবে। একটি ভদ্র কালারের মানানসই শার্ট যেমন সাদা/কালো/হালকা নীল রংয়ের, এবং কালো দেখে এক জোড়া সু পরিধান করতে হবে। আর প্যান্ট হিসেবে ভদ্র সমাজে পরিচিত প্যান্টের যে কোন একটি পরলেই হবে।
তবে প্যান্ট কালো হলে দেখতে একটু বেশি সুন্দর লাগবে। পোশাকে মনোযোগ দেওয়ার কারণ হচ্ছে ভাইভা বোর্ডে প্রথম দেখাতে একটা ইম্প্রেশন তৈরি করা। এতে আপনার রুচির ব্যাপারে বোর্ড কর্তাদের একটি সুন্দর ধারণা সৃষ্টি হবে।
৩. যথা সময়ে উপস্থিত থাকা: ভাইভার দিন আপনাকে অবশ্যই শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করতে হবে। হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন। অনেক প্রার্থী যথা সময়ে না আসার কারণে বাদ পড়ে যান। আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ে করে এসে ঘেমে একাকার হয়ে যায়। এরুপ হলে তা আপনার ভাইভাতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে।
একটু আগে বাগে এসে সেই প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি অবস্থা যেমন, আশেপাশে কি কি আছে, কোন বিল্ডিং কোন দিকে, ভাইভা বোর্ডের রাস্তা কোন দিক থেকে কোন দিকে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতারাং ভাইভার দিন অবশ্যই তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন।
৪. গুরুত্বপূর্ণ কাগজ সাথে রাখা: ভাইভাতে আসার সময় আপনার প্রয়োজনীয় একাডেমিক কাগজপত্রের ফটোকপি সাথে রাখবেন। যদিও বোর্ডের কাছে আপনার সমস্ত কাগজপত্র থাকবে। আর সাথে একটি ডায়েরী ও কলম রাখবেন। তবে ভাইভাতে আাসর সময় আপনার ফোন বাসায় রেখে আসবেন। ভুলেও ফোন নিয়ে ডুকবেন না।
৫. পর্যাপ্ত খাওয়া ও বিশ্রাম: ভাইভাতে মুখোমুখি হওয়ার আগে পর্যাপ্ত খেয়ে নিবেন। তবে হালকা খেলেও চলবে। কারণ আপনার সিরিয়াল আসার আগ পর্যন্ত আপনাকে সেখানেই থাকতে হবে। বাহিরে বের হওয়ার উপায় নেই। তাই আগ থেকে পরিমিত খেয়ে নিবেন। ভাইভার আগের দিন বেশি রাত জাগবেন না। এতে আপনার মনোযোগের বিগ্ন ঘটতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম হলে ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে দেখতেও ফ্রেশ লাগবে।
১. সালাম বা অভিবাদন জানানো: ভাইভাতে আপনার ডাক আসলে ভাইবা কক্ষে প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে ডুকবেন। যথাসম্ভব স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে আপনার চেয়ারের পাশে দাড়াবেন। আপনার আসনে বসার আগে তাদের থেকে বসার অনুমতি নিয়ে বসুন। বসার পর সর্বপ্রথম কাজ হলো ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যকে একপলকে দেখে নেয়া। আপনার সঙ্গে আনা কাগজপত্র আপনার সামনে রাখুন।
২. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ: ভাইভা বোর্ডে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বোর্ড কর্তারা আপনার সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা পেয়ে যাবে। প্রথমত, আপনার হাত ভাজ করে রাখবেন না। হাত যথাসম্ভব দুই হাটুর উপরে রাখুন। দ্বিতীয়ত, চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। ভাইভা বোর্ডে প্রশ্নকর্তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন, এতে প্রশ্নকর্তার কাছে আপনাকে কনফিডেন্স দেখাবে। চেষ্টা করবেন সবার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে। এতে বাকি কর্তারা আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করবে।
তৃতীয়ত, পায়ের উপর না রাখা। এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেয়। বোর্ড সদস্যরা আপনার পায়ের উপর পা রাখা দেখে আপনাকে একজন আত্মনির্ভরশীল এবং অহংকারী ভাববে। চতুর্থত, হ্যান্ডশেক করার জন্য নিজ থেকে হাত বাড়াবেন না। ভাইভা বোর্ড প্রবেশ করার পর ভাইবাবোর্ড সদস্যদের দিকে হ্যান্ড শেকের জন্য হাত বাড়ানো অনেকটা দৃষ্টিকটু দেখতে। পঞ্চমত, মুদ্রাদোষ বর্জন করুন।
আমাদের অধিকাংশের এই মুদ্রদোষ জনিত সমস্যা রয়েছে। মুদ্রাদোষগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বারবার জামা ঠিক করা, মুখে হাত দেওয়া, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, অপ্রয়োজনে জিহবা বের করা ইত্যাদি। এসব মুদ্রাদোষ যথাসম্ভব পরিত্যাগ করতে হবে।
৩. মুখে হাসি রাখুন: প্রশ্নকর্তার উত্তর দেওয়ার সময় চেষ্টা করবেন মুখে হাসি রেখে উত্তর দিতে। এতে আপনাকে দেখতেও সুন্দর এবং আত্মবিশ্বাসি মনে হবে। তবে ভুলেও শব্দ করে হাসা যাবে না। মুখে সব সময় মৃদু হাসি হাসি ভাব রেখে কথা বলবেন।
৪. অযথা তর্কে যাবেন না: দেখুন, ভাইভা বোর্ডে যারা থাকবে তারা অবশ্যই যথেষ্ট জ্ঞানী। যদি কোন উত্তরে তাদের সাথে আপনার দ্বিমত তৈরি হয়, তবে সেটি তর্ক না করে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন।
৫. সততার সাথে উত্তর দিন
৬. প্রশ্নকর্তার উত্তর যথাসম্ভব স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত করে বলুন।
৭. নেগেটিভ কথা পরিহার করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link