রেড ইন্ডিয়ান কারা?

নিজ দেশে পরবাসী কথাটা একমাত্র আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই মহাদেশের শুরুর লগ্ন থেকেই যাদের বসবাস। ক্রমাগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জন্মহ্রাসের ফলে তাদের জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমতে শুরু করে। যার ফলে এখন তারা নিজ দেশেই উপজাতি হিসাবে বাস করে যাচ্ছে।

রেড ইন্ডিয়ান নামের উৎপত্তি 

রেড ইন্ডিয়ান শব্দটি প্রায়শই পশ্চিম গোলার্ধের আদিবাসী সংস্কৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মূলত রেড ইন্ডিয়ান বলতে আমেরিকার আদি ভূমি মালিকদের নির্দিষ্ট করতে ব্যবহৃত হয়। পনের শতকে পর্তুগিজ নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস জলপথে ভারতীয় উপমহাদেশের খোঁজে বের হন। তিনি ভুলবশত ভারতবর্ষে পৌছানোর পরিবর্তে আমেরিকার বাহামা দ্বীপে এসে পৌছায় এবং মনে করেছিলেন তিনি সত্যিই ভারতবর্ষে আসার জলপথ আবিষ্কার করেছেন।

রেড ইন্ডিয়ান কারা, azhar bd academy
Image source: pixabay.com


তিনি সেখানে লোকদের চেহারা তামাটে বা লালচে রংয়ের দেখে তাদের নাম দেন রেড ইন্ডিয়ান। কেউ কেউ মনে করেন তারা সবসময় মুখে এবং সমগ্র শরীরে লাল রং মেখে রাখতো তাই তাদেরকে এই নামে অভিহিত করা হয়। 

সেই থেকে এই নামটি বহু শতাব্দি পর্যন্ত মানুষ ডেকে আসছে। পরবর্তী কয়েক বছর পর ইতালির নাবিক আমেরিগো ভেসপুচিস এই মহাদেশ সম্পূর্ণরুপে আবিষ্কার করেন। জার্মান চিত্রগ্রাহক মার্টিন ওয়াল্ডসেমল্লার আমেরিগো ভেসপুচির নাম অনুসারে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিলেন। সেই থেকে আমেরিকান নামটি পশ্চিম গোলার্ধের মহাদেশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। 

কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করার পূর্ব থেকেই রেড ইন্ডিয়ানরা এই অঞ্চলে বাস করত।আমেরিকা আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত তারা বেশ সুখে শান্তিতেই ছিল। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই শিকার এবং কৃষিকাজ করে জীবনধারণ করতো। কলম্বাসের আবিষ্কারের পর ইউরোপীয় মানুষ এই অঞ্চলে আসতে শুরু করে। 

বিশেষ করে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে শিল্পের কাঁচা মালের জন্য  এবং উৎপন্ন সামগ্রি বিক্রি করতে তারা আমেরিকায় আসতে লাগল । সেখানে তারা কলোনী স্থাপন করে বসবাস শুরু করে। এই অসম ব্যানিজ্য যুদ্ধে তারা প্রায় সময় রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হত।

ইউরোপীয়ানদের সাথে রেড ইন্ডিয়ানরা যুদ্ধে বারংবার হেরে গিয়ে একপেশে হয়ে যায়। পরে ইউরোপিয়ানরা এখানে এসে রেড  ইন্ডিয়ানদেরকে অবৈধভাবে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত, জমি দখল এবং গৃহপালিত পশু কেড়ে নেয়া শুরু করলো। ফলে তাদের সাথে প্রায় সময় যুদ্ধ বাঁধত । ইউরোপিয়ানদের উন্নত রণ কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল অনেক রেড ইন্ডিয়ানকে। 

রেড ইন্ডিয়ান বা আমেরিকার আদিবাসীরা এই মহাদেশে কিভাবে আসলো তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কেউ মনে করেন, প্রায় ৩০ হাজার বছর পূর্বে আমেরিকা মহাদেশ এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। সেই সময় এশিয়ার লোকজন চিলি হয়ে আমেরিকায় চলে যায়। 

পরবর্তীতে মহাদেশীয় প্লেট সরে যাওয়ার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমেরিকার এই আদিবাসীরা একেবারে আলাদা হয়ে জীবনযাপন শুরু করে। দিনে দিনে তাদের স্বাতন্ত্র‌্য সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং নিজস্ব জীবনধারা গড়ে তুলে। 

রেড ইন্ডিয়ান সংস্কৃতি ও জীবনধারা

প্রকৃতির সাথে তাদের এক অস্বাভাবিক সংযোগ দেখা যায়। তারা উদ্ভিদ থেকে ওষুধ তৈরি করে। দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে গাছের ছাল, বাকল, ডাল, পাতার নানাভাবে ব্যবহার করে। তারা পশু-পাখির চামড়া, হাড়, দাঁত মূলত পোশাক এবং অলংকার হিসেবেই পরিধান করত।
তারা কৃষিকাজ, প্রাণি শিকার এবং বন থেকে সংগ্রহ করা ফলমূল খেয়ে বাঁচত। ৮০০ খ্রিস্টাব্দে নেটিব আমেরিকানরা তিনটি প্রধান ফসল শিম, ভুট্টা এবং লাউ উদ্ভাবিত করে। 

বর্তমানে মার্কিন যুক্তাষ্ট্রে প্রায় ৩.৫ মিলিয়নের বেশি রেড ইন্ডিয়ান বাস করে। যা আমেরিকার জনসংখ্যার ১.৫%। শহরে বাস করা আদিবাসীরা অত্যন্ত দরিদ্রজীবন যাপন করে। বর্ণবাদ, শিক্ষা এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য প্রায় সময় অন্যদের সাথে মিশতে পারত না।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রেড ইন্ডিয়ানদের দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, ব্রাজিল, চিলি, গুয়েতমালা এবং বলিভিয়ায় বসবাস করে। 

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন