ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি
আরব ইসরাইল সংঘাতের প্রেক্ষিতে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন কর্তৃক স্বাক্ষরিত চুক্তি ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি নামে পরিচিত।মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন ক্যাম্প ডেভিডে (Camp David) প্রায় দুই সপ্তাহ গোপন আলোচনার পর, ১৭ সেপ্টেম্বের, ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার বিবাদমান দুই পক্ষকে একত্রিত করার মাধ্যমে যুগান্তকারী চুক্তিটি সম্পন্ন করে । চুক্তির ফলস্বরুপ, ইসরায়েল এবং মিশরের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরি সম্পর্ক স্থিতিশীল হয়। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিতে অবদান রাখায় ১৯৭৮ সালে আনোয়ার সাদাত এবং মেনাখেম বেগিন যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করে। কিন্তু এ চুক্তির কারণে মিশরকে ১৯৭৯ সালে আরব লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়।
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের রাষ্ট্রের অস্তিত্বের আরব স্বীকৃতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর, মিশর ও ইসরায়েল বিভিন্ন সামরিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ এবং ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধের পর উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে মিশর ও ইসরাইলের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক মেলবন্ধন তৈরি হয়।
আরো পড়ুন, ২য় ভার্সাই চুক্তি কি?
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির বিষয়বস্তু
ওয়াশিংটনের ক্যাম্প ডেভিডে মিশর এবং ইসরাইলকে আলোচনা বা সমঝোতায় যাওয়ার জন্য জিমি কার্টারকে প্রতিটি নেতার সাথে তাদের নিজ নিজ কেবিনে পৃথকভাবে কথা বলতে হয়েছিল। তবুও, মিশর এবং ইসরাইল পূর্বের বেশ কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ে একমত হতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে দুটি পৃথক চুক্তি সম্পাদিত হয়।
প্রথম চুক্তি, "মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি কাঠামো" এতে বলা হয়েছে,
১. গাজা এবং পশ্চিম তীরের ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে একটি স্বশাসিত কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে।
২. জাতিসংঘের রেজোলিউশন ২৪২-এর বিধানের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন। যার মধ্যে, ছয় দিনের আরব- ইসরাইল যুদ্ধের সময় দখলকৃত পশ্চিম তীরের ভূমি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বেসামরিকদের প্রত্যাহার।
৩. "ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার স্বীকৃতি এবং পাঁচ বছরের মধ্যে পশ্চিম তীর এবং গাজার মধ্যে তাদের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু।
দ্বিতীয় চুক্তি, যার নাম "মিশর ও ইসরাইলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির সমাপ্তির জন্য একটি কাঠামো",
১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় চুক্তিটি অনুমোদিত হয়। চুক্তির ফলস্বরূপ, ইসরাইলকে সিনাই উপদ্বীপ থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার এবং মিশরের সাথে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার আহ্বান জানান। মিশর ইসরায়েলি জাহাজগুলিকে তিরান প্রণালী ও সুয়েজ খাল ব্যবহার করার অনুমতি দিতে বাধ্য হবে।
আলোচ্য চুক্তির শর্তাবলীর প্রয়োগে, মিশর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বার্ষিক ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা পায় এবং ইসরাইল পায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইসরাইল-মিশর শান্তি চুক্তিতে নির্ধারিত মার্কিন সহায়তাগুলি আজও অব্যাহত রয়েছে।
আরো পড়ুন, শেনজেন চুক্তি কী? ইতিহাস ও দেশসমূহ
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ফলাফল
গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিটি কয়েক দশক ধরে মিশর ও ইসরাইলের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকারকে মিসরের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেখে আরব লীগ থেকে মিশরকে বহিস্কার করা হয়। মধ্যপ্রচ্যের উত্তর আফ্রিকান দেশ মিশরকে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য সদস্যপদ থেকে স্থগিত করে।
এছাড়া জাতিসংঘ প্রথম চুক্তি তথাকথিত "মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কাঠামো" এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি, কারণ এটি ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বের সম্মতি ছাড়া সম্পাদিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন, জেনেভা কনভেনশন কি? প্রেক্ষাপট ও শর্তসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link