পরিমাপের একক সমূহ

১৭৪০ সালের ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমি এর এক জরিপের ভিত্তিতে ফ্রান্সে ১৯৭৫ সালে  একটি কনফারেন্সে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিমাপ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। একে International System of Units বা (SI) unit বলা হয়।

বর্তমানে এই পদ্ধতিতে সাতটি মৌলিক একক যেমন (মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড, অ্যাম্পিয়ার, কেলবিন মৌল ও ক্যান্ডেলা)। এবং দুটি পরিপূরক একক (রেডিয়াম ও ষ্টেরেডিয়ান) একক বিদ্যামান রয়েছে।

বিভিন্ন দেশে পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত থাকায় আন্তর্জাতিক ব্যবসায়
বাণিজ্য ও আদান-প্রদানে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিমাপ করার জন্য মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে প্রথম এ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৮২ সালের ১ জুলাই থেকে মেট্রিক পদ্ধতিতে পরিমাপ চালু হয়। বর্তমানে দৈর্ঘ্য, ওজন, এবং আয়তন পরিমাপের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলো প্রচলিত রয়েছে।


পরিমাপের একক সমূহ, ‍azhar bd academy

১. দৈর্ঘ্য পরিমাপের পদ্ধতি ও একক

দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হল মিটার। পৃথিবীর উত্তর মেরু হতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের দ্রাঘিমা বরাবর বিষুব রেখ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের কোটি ভাগের এক ভাগকে এক মিটার হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এ দৈর্ঘ্য মাপ সুবিধাজনক নয় বিধায়, পরবর্তীতে  প্যারিসের মিউজিয়ামে রক্ষিত একখণ্ড প্লাটিনাম রড এর দৈর্ঘ্য ১ মিটার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ঐ দৈর্ঘ্যকে একক হিসেবে ধরে রৈখিক মাপ করা হয়।

দৈর্ঘ্যের একক মিটার থেকে মেট্রিক পদ্ধতির নামকরণ করা হয়। দৈর্ঘ্যের পরিমাণ কম হলে সেন্টিমিটারের প্রকাশ করা হয় এবং দৈর্ঘ্যের পরিমাণ বেশি হলে কিলোমিটারে প্রকাশ করা হয়। যেমন,

মেট্রিক পদ্ধতি দৈর্ঘ্য পরিমাপ
  • ১০ মিলিমিটার    = ১ সেন্টিমিটার
  • ১০ সেন্টিমিটার    = ১ ডেসিমিটার
  • ১০ ডেসিমিটার     = ১ মিটার
  • ১০০ সেন্টিমিটার    = ১ মিটার
  • ১০ মিটার    = ১ ডেকামিটার
  • ১০ ডেকামিটার    = ১ হেক্টোমিটার
  • ১০ হেক্টোমিটার    = ১ কিলোমিটার
  • ১ কিলোমিটার    = ১০০০ মিটার
  • ১ মিটার    = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি (প্রায়)
  • ১ কিলোমি.    = ০.৬২ মাইল (প্রায়)
  • ১ ইঞ্চি    = ২.৫৪ সে.মি.
  • ১ মাইল    = ১.৬০ কিলোমিটার
  • ১ নটিক্যাল মাইল    = ১.৮৫৩ কিলোমিটার/ ১৮৫৩.১৮ মিটার
  • ২০০ নটিক্যাল মাইল    = ৩৭০ কিলোমিটার (প্রায়)


বস্ত্রের দৈর্ঘ্য পরিমাপের দেশীয় পদ্ধতি
  • ৩ যবোদার    = ১ আঙ্গুলী
  • ৩ আঙ্গুলী    = ১ গিরা
  • ৩ গিরা    = ১ হাত
  • ১৬ গিরা    = ১ গজ
  • ১৮ ইঞ্চি    = ১ হাত
  • ৩৬ ইঞ্চি    = ১ গজ
  • ২ হাত    = ১ গজ
  • ২০ গজ    = ১ থান



ভূমির/জমির ক্ষেত্রফল পরিমাপে দেশীয় ও ব্রিটিশ পদ্ধতি
  • ১ বর্গ হাত    = ১ গন্ডা
  • ২০ গন্ডা    = ১ ছটাক
  • ১ ছটাক    = ৫ বর্গগজ
  • ১৬ ছটাক    = ১ কাঠা
  • ১ কাঠা    = ৮০ বর্গগজ
  • ১ বিঘা    = ২০ কাটা/ ১৬০০ বর্গগজ
  • ১০৮ ঘনহাত    = ১ কুয়া
  • ৩৬৪ ঘনফুট    = ১ কুয়া
  • ১০০০ ঘনফুট    = ২.৭৫ কুয়া
  • ১৪৪ বর্গ ইঞ্চি    = ১ বর্গফুট
  • ৯ বর্গফুট    = ১ বর্গগজ
  • ১৭৬০ গজ    = ১ মাইল
  • ৪৮৪০ বর্গগজ    = ১ একর

২. ওজন পরিমাপে মেট্রিক ও দেশীয় পদ্ধতি

ওজন পরিমাপের একক হল গ্রাম। কম ওজনের বস্তুকে গ্রামে এবং বেশি ওজনের বস্তুকে কিলোগ্রামে প্রকাশ করা হয় বা মেট্রিক টনে পরিমাপ করা হয়।
  • ১০ মিলিগ্রাম    = ১ সেন্টিগ্রাম
  • ১০ সেন্টিগ্রাম    = ১ ডেসিগ্রাম
  • ১০০ সেন্টিগ্রাম    = ১ গ্রাম
  • ১০ ডেসিগ্রাম    = ১ গ্রাম
  • ১০ গ্রাম    = ১ ডেকাগ্রাম
  • ১০ ডেকাগ্রাম    = ১ হেক্টোগ্রাম
  • ১০ হেক্টোগ্রাম    = ১ কিলোগ্রাম
  • ১০ কিলোগ্রাম    = ১ কুইন্টাল
  • ১০ কুইন্টাল    = ১ মেট্রিক টন
  • ১০০০ কিলোগ্রাম    = ১ মেট্রিক টন


দেশীয় একক
  • ৬ রতি    = ১ আনা/ ১ তোলা
  • ১৬ আনা    = ১ ভরি
  • ৫ ভরি    = ১ ছটাক
  • ৪ ছটাক    = ১ পোয়া
  • ১৬ ছটাক    = ১ সের
  • ৪০ সের    = ১ মণ


৩. তরলের আয়তন পরিমাপ পদ্ধতি

তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের একক হলাে লিটার। এটা মেট্রিক পদ্ধতির একক। কোন তরল পদার্থ কতটুকু জায়গা দখল করে আছে তা হলাে তার আয়তন। নির্দিষ্ট আয়তনের ঘনবস্তুর আকৃতির মাপনি দ্বারা তরল পদার্থ মাপা হয়। কম আয়তনের তরল পদার্থের পরিমাপ হলো লিটার। বেশি আয়তনের তরল পদার্থের পরিমাপের জন্য কিলােলিটার ব্যবহার করা হয়।
  • ১০ মিলিলিটার    = ১ সেন্টিলিটার
  • ১০ সেন্টিলিটার    = ১ ডেসিলিটার
  • ১০ ডেসিলিটার    = ১ লিটার
  • ১০০ সেন্টিলিটার    = ১ লিটার
  • ১০ লিটার    = ১ ডেকালিটার
  • ১০ ডেকালিটার    = ১ হেক্টোলিটার
  • ১০ হেক্টোলিটার    = ১ কিলোলিটার
  • ১০০০ লিটার    = ১ কিলোলিটার
  • ১ ঘনফুট    = ২৮৬৭ লিটার (প্রায়)
  • ১ গ্যালন    = ৪.৫৫ লিটার
  • ১ কিউসেক    = ২৮.৩১৭ লিটার
  • ১ ব্যারেল    = ১৫৯ লিটার

ক্ষেত্রফল পরিমাপ পদ্ধতি

কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ মান হলাে ক্ষেত্র, এবং এই ক্ষেত্রের পরিমাপকে বলে 
ক্ষেত্রফল। ক্ষেত্রফল পরিমাপের একককে বর্গ একক হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

ক্ষেত্রফল পরিমাপের সূত্র সমূহ

  1. আয়তকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ) বর্গ একক
  2. বর্গাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = (বাহু)² বর্গ একক
  3. ত্রিভূজকারক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ =  1/2 (ভূমি x উচ্চতা) একক
  4. সামন্তরিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = (ভূমি x উচ্চতা) বর্গ একক
  5. আয়তকার ক্ষেত্রের পরিসীমা = ২ (দৈর্ঘ্য + প্রস্থ) একক
  6. ঘনকের সমগ্র তলের ক্ষেত্রফল = ৬ x (দৈর্ঘ্য)² বর্গ একক
  7. আয়তকার ঘনবস্তুর আয়তন = (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ xউচ্চতা) ঘন একক
  8. ঘনকের আয়তন = (দৈর্ঘ্য)³ ঘন একক

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন