বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তারমধ্যে কমিউনিজম এবং সমাজতন্ত্র দুটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্যতম। কমিউনিজমকে একটি সামাজিক সংগঠন ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যেখানে সম্প্রদায় সম্পত্তির মালিক এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য অনুসারে সম্পদ গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, সমাজতন্ত্র একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব যেখানে উৎপাদন, বিতরণ এবং বিনিময়ের মাধ্যম সমগ্র সমাজের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত। সমাজতন্ত্রে ব্যক্তির প্রচেষ্টা এবং অবদান অনুসারে সম্পদ বিতরণ করা হয়।
কমিউনিজম কি?
সাম্যবাদ বা কমিউনিজম হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই কমিউনিজমের একমাত্র লক্ষ্য।
‘কমিউনিজম’ শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে আগত, যার অর্থ সাধারণ। কমিউনিজম অর্থনীতিতে উৎপাদনের মাধ্যমগুলো মানুষের মালিকানাধীন। কমিউনিজমে সম্পদ মানুষের প্রয়োজনের অনুসারে বিতরণ করা হয়, যা অর্থনৈতিক সমতার নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং লাওসে কমিউনিজম ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
কমিউনিজমের বৈশিষ্ট্য
- এটি একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ধারণা
- কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস কমিউনিজমের প্রবক্তা।
- সমাজের সদস্যদের মধ্যে সমতা অর্জন এবং শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা।
- ব্যক্তির চাহিদা অনুসারে সম্পদ বন্টন।
- উৎপাদনের মাধ্যমগুলো রাজ্যের সদস্যদের সমান মালিকানাধীন।
- ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হতে পারে না
- অর্থনৈতিক বাজার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের সাথে সীমিত প্রতিযোগিতা থাকে।
- শ্রমিকরা তাদের পেশা বেছে নিতে পারে।
- রাষ্ট্র শিল্পের মালিক
সমাজতন্ত্র কি?
যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণগুলো (শিল্প কলকারখানা) সাধারণত সমাজের মালিকানায় পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি সমতার নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা, যেখানে সকল মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।
এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির প্রচেষ্টা অনুযায়ী সম্পদ মধ্যে বিতরণ করা হয়। সমাজতন্ত্রে আয়ের সমান বন্টন থাকে, যার লক্ষ্য ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করা।বর্তমানে ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, কানাডাসহ কিছু দেশে সমাজতন্ত্র বিদ্যমান।
সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
- উৎপাদনের মাধ্যম সর্বজনীন বা সমবায় মালিকানা রয়েছে।
- সমাজের সদস্যদের মধ্যে সমতা ও ন্যায্যতা অর্জন করা।
- প্রচেষ্টা বা অবদান অনুযায়ী সম্পদ বন্টন।
- নাগরিকদের মালিকানাধীন।
- ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা নেই। শিল্প ও বাজার রাষ্ট্রের মালিকানাধীন।
- রাষ্ট্র নাগরিকের পেশা ও কর্মসংস্থান নির্ধারণ করে।
- সব উৎপাদন ক্ষমতার মালিক রাষ্ট্র।
কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্রের পার্থক্য
১. কমিউনিজম একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। বিপরীতে, সমাজতন্ত্র একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
২. কমিউনিজমের মূল ধারণা হল সমাজের সদস্যদের মধ্যে সমতা অর্জন এবং শ্রেণীমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে সমতা ও ন্যায্যতা অর্জন সমাজতন্ত্রের ধারণা।
৩. কমিউনিজমে সম্পদ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করা হয়। বিপরীতভাবে, সমাজতন্ত্রে সম্পদ বিতরণ তাদের প্রদত্ত অবদানের উপর ভিত্তি করে।
৪. রাষ্ট্রের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে কমিউনিজমে উৎপাদনের উপকরণের মালিক। সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের মাধ্যম নাগরিকদের মালিকানাধীন।
৫. কমিউনিজমে ব্যবস্থাপনা একটি নির্দিষ্ট কর্তৃত্ববাদী দলের লোকের হাতে থাকে। সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে সম্পদের ব্যবস্থাপনা জনগণ করে থাকে।
৬. কমিউনিজমে পুঁজিবাদকে অপসারণের চেষ্টা করে, যেখানে সমাজতন্ত্রে কোনো না কোনোভাবে পুঁজিবাদ বিদ্যমান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link