কারক কত প্রকার ও কি কি

কারক শব্দটির অর্থ - যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত পদকে কারক বলে।

কারক কত প্রকার

কারক ছয় প্রকার। যথা: কর্তৃকারক, কর্ম কারক, করণ কারক, সম্প্রদান কারক, অপাদান কারক ও অধিকরণ কারক। একটি বাক্যে ছয়টি কারকের উদাহরণ-

কারক কত প্রকার ও কি কি, ‍azhar bd academy


১. কর্তৃকারক

বাক্যে যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তা বা কর্তৃকারক। ক্রিয়ার সঙ্গে কে বা কারা যােগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্তৃকারক। যেমন- রহিম বই পড়ে। কে পড়ে? রহিম, এখানে রহিম কর্তৃকারক। ছেলেরা মাছ তােলে। কারা তােলে? ছেলেরা, এখানে ছেলেরা কর্তৃকারক।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

ক. বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্তৃকারক চার প্রকারের হয়ে থাকে ।
  1. মুখ্য কর্তা : যে নিজেই ক্রিয়া বা কাজ সম্পাদন করে সে মুখ্য কর্তা। যেমন ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
  2. প্রযােজক কর্তা : মূল কর্তার করণীয় কাজ যখন অন্যকে নিয়ােজিত করে সম্পন্ন করায়, তখন তাকে প্রযােজক কর্তা বলে। যেমন - শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
  3. প্রযােজ্য কর্তা : মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযােজ্য কর্তা বলে। রাখাল (প্রযােজক) গরুকে (প্রযােজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।
  4. ব্যতিহার কর্তা : বাক্যে দুটো কর্তা একই সাথে একই কাজ সম্পাদন করলে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই।
খ, বাক্যের প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন-
  1. কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে) : পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
  2. ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে) : আমার যাওয়া হবে না।
  3. কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়) : বাঁশি বাজে।
কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
ক) প্রথমা শূন্য বা অ বিভক্তি = কবির বই পড়ে।
খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি = রহিমকে যেতে হবে।
গ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি = ফেরদৌসী কর্তৃক/দ্বার শাহনামা রচিত হয়েছে।
ঘ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি =  আমার যাওয়া হয়নি।
ঙ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি = পায়ে মানে না, আপনি মােড়ল !, পাগলে কী না বলে।



২. কর্মকারক

যাকে আশ্রয় করে কর্তা তার কাজ সম্পন্ন করে, তাকে কর্মকারক বলে। কর্ম দুই প্রকার : মুখ্য কর্ম, গৌণ কর্ম। যেমন- বাবা আমাকে (গৌণ কর্ম) একটি বই (মুখ্য কর্ম) কিনে দিয়েছেন। সাধারণত মুখ্য কর্ম বস্তুবাচক ও গৌণ কর্ম প্রাণিবাচক হয়ে থাকে। তাছাড়া, সাধারণত কর্মকারকের গৌণ কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয়, মুখ্য কর্মে হয় না।

কি’ এবং ‘কাকে’ শব্দ দ্বারা ক্রিয়াকে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যাবে, তাই কর্ম কারক। যেমন: রহিমা ফুল তোলে। কি তোলে? ফুল তোলে, এখানে ফুল কর্মকারক। বাচ্চাটিকে বিছানায় শোয়াও। কাকে শোয়ানো হচ্ছে? বাচ্চাটিকে, এখানে বাচ্চাটি কর্মকারক।


কর্মকারকের প্রকারভেদ

  1. সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম : নাসিমা ফুল তুলছে।
  2. প্রযােজক ক্রিয়ার কর্ম : ছেলেটিকে বিছানায় শােয়াও।
  3. সমধাতুজ কর্ম : খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।
  4. উদ্দেশ্য ও বিধেয় : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর অপেক্ষিত কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম। যেমন- দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মােরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি।
কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

ক. প্রথমা, শূন্য বা অ বিভক্তি = ডাক্তার ডাক। আমাকে একখানা বই দাও।
খ. দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি = ‘আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মাের প্রার্থনা।’
গ. যষ্ঠী বা র বিভক্তি = তোমার দেখা পেলাম
ঘ. সপ্তমী বা এ বিভক্তি = দাওয়াত দিবে জনে জনে ।



                        এক কথায় প্রকাশ

৩. করণ কারক

ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, মাধ্যম বা সহায়ককেই করণ কারক বলা হয়। বাক্যের ক্রিয়াপদকে কী দ্বারা, কীসের দ্বারা বা কী উপায়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায়, তা-ই কারণ কারক। যথা: কাকলি কলম দিয়ে লেখে। কী দ্বার? কলম দ্বারা, এখানে কলম করণ কারক।

করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

ক. প্রথমা ৰা শূন্য বা অ বিভক্তি = ছাত্ররা বল খেলে।
খ. তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি = সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে
গ. সপ্তমী বিভক্তি বা এ বিভক্তি = ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে।

৪. সম্প্রদান কারক

যাকে সত্ব ত্যাগ করে কোন কিছু দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে।
সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
ক. চতুর্থী বা কে বিভক্তি = ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। তবে, (সত্ব ত্যাগ করে না দিলে সেটি কর্মকারক হবে। যেমন ; ধােপাকে কাপড় দাও ।
খ. সপ্তমী বা এ বিভক্তি =  সৎপাত্রে কন্যা দান কর। সমিতিতে চাঁদা দাও।

৫. অপাদান কারক

যা থেকে কিছু গৃহীত, বিচ্ছ্যুত,বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয়, তাকেই অপাদান কারক বলে। 


যেমন-
গাছ থেকে পাতা পড়ে।
মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে।
দুধ থেকে দই হয়।
জমি থেকে ফল পাই।
খেজুর রসে গুড় হয়।
সােমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।
বাঘকে ভয় পায় না কে?

অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

ক. প্রথমা বা শূন্য বা অ বিভক্তি = বোটা-আলগা ফল গাছে থাকে না।
খ. দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি = বাবাকে বড় ভয় পাই।
গ. ষষ্ঠী বা এর বিতিক্ত = যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।
ঘ. সপ্তমী বা এ বিভক্তি = বিপদে মােরে করিবে ত্রাণ। তিলে তৈল হয় ।

৬. অধিকরণ কারক

ক্রিয়া বা কাজ সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ ‘এ’ ‘য়’ ত' ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। যথা- আধার (স্থান); আমরা রােজ স্কুলে যাই। এ বাড়িতে কেউ নেই। কাল (সময়); প্রভাতে সূর্য ওঠে।

অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ

অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথা: কালাধিকরণ কারক, আধারাধিকরণ কারক, এবং
ভাবাধিকরণ কারক। 
  1. কালাধিকরণ কারক : কাল অর্থ সময়। অর্থাৎ যত সময়ের অধিকরণ হবে তখন সেটি কালাধিকরন কারক হবে। যেমন; সকালে পড়তে বসব, শরতে শিশির পড়ে ইত্যাদি।
  2. ভাবাধিকরণ কারক : একটি ক্রিয়ার কারণে অন্য আরেকটি ক্রিয়া সসংগঠিত হলে তাকে ভাবাধিকরণ কারক বলে। যথা; সূর্যদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়
  3. আধারিকরণ কারক : আধার শব্দের অর্থ হচ্ছে স্থান। যেখানে ক্রিয়া সংগঠিত হওয়ার স্থান থাকবে, তা আধারিকরণ কারক হবে। যথা: পুকরে মাছ আছে। 

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন