শিক্ষার সংজ্ঞা
শিক্ষা বলতে সেই শৃঙ্খলাকে বোঝায় যা স্কুল বা স্কুলের মতো পরিবেশে শিক্ষাদান এবং শেখার পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষা হল পদ্ধতিগত নির্দেশনা গ্রহণ বা প্রদানের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে একটি স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শিক্ষা হল শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ এবং শেখার একটি প্রক্রিয়া, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের উন্নতি এবং দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রদান করা হয়। শিক্ষা প্রধানত তিন প্রকার, যথা, আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক এবং অপ্রথাগত বা উপানুষ্ঠানিক।
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্মরুপ।
১. শিক্ষার সকল স্তরে সাংবিধানিক গ্যারান্টি প্রতিফলিত করা এবং শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার সম্পর্কে সচেতন করা।
২. শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যবহারিক গুণাবলীকে উদ্দীপিত করা যাতে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক মূল্যবোধ ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা এবং দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ এবং ভালো নাগরিক গুণাবলী বিকাশ ঘটানো (অর্থাৎ ন্যায়বিচার, অসাম্প্রদায়িকতা, কর্তব্যপরায়ণতা, মানবাধিকারের সচেতনতা, মুক্ত চিন্তা ও শৃঙ্খলা, সৎ জীবন, সহনশীলতা, এবং অধ্যবসায় ইত্যাদি)।
৪. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরস্পরায় প্রচার করা।
৫. দেশজ আবহ ও উপাদান সম্পৃক্ততায় শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা যাতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জীবনমুখী বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।
৬. দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে সৃজনশীলতা, ব্যবহারিকতা এবং উৎপাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে এমন একটি শিক্ষা প্রক্রিয়া বিকশিত করা। শিক্ষার্থীদের একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করা।
৭. জাতি-ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
৮. বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সবার জন্য শিক্ষার নিরবিচ্ছিন্ন এবং সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।
৯. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের জন্য বিভিন্ন মতাদর্শের প্রতি সহনশীলতা দেখানো এবং জীবনমুখী, বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।
১০. প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক দক্ষতা নিশ্চিত করা যাতে তারা মূখস্ত বিদ্যা থেকে নিরুৎসাহিত হয়, বরং তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কল্পনা এবং কৌতূহলের জন্য তাগিদ ব্যবহার করে।
১১. শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং শিক্ষার স্তরে উচ্চ মানের দক্ষতা নিশ্চিত করা যাতে শিক্ষার্থীরা সফলভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা করতে পারে।
১২. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া এবং গণিত, ইংরেজি, ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
১৩. শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। শিক্ষার্থীদের শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহ করে তোল। শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের স্ব-কর্মসংস্থানের সুবিধার্থে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম করা।
১৪. শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু অভিন্ন এবং মৌলিক ধারণা বিকাশের লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের স্কুলে নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয়ের অভিন্ন পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন করা। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরেও কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে পাঠদান।
১৫. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের যথাযথ সুরক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য সৃজনশীল, অনুকূল এবং আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা।
১৬. শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষা এবং নৈতিক বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সঠিক নৈতিক চরিত্রের সাথে বড় হতে সাহায্য করা।
১৭. প্রতিটি স্তরে শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করা এবং পূর্ববতী স্তরে অর্জিত জ্ঞান এবং দক্ষতার ভিত দৃঢ় করে পরবর্তী স্তরের সাথে সমন্বয় স্থাপন করা। এই ধরনের জ্ঞান এবং দক্ষতার সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করা এবং শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম করা। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং বৃত্তিমূলক স্তরে যথাযথ অবদান রাখার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা।
১৮. শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ-সচেতনা এবং এসকল বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।
১৯. সকল শাখায় উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করা এবং গবেষণায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের গবেষণার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় গবেষণার অনুকূল এবং পরিবেশ তৈরি করা।
২০. উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা চর্চা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেলক্ষ্যে যথাযথ আবহ ও পারিপাশ্বিকতা নিশ্চিত করা।
২১. প্রতিটি স্তরের শিক্ষা প্রক্রিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) -এর ব্যবহার প্রসারিত করা।
২২. আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও বিকাশ।
২৩. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত কার।
২৪. নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত সমাজ গঠন করা।
২৫. শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২৬. বাংলা ভাষা শুদ্ধ সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া নিশ্চিত করা।
২৭. শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর সুস্থ বৃদ্ধির জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, খেলাধুলা, খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়ামের সুবিধা তৈরির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২৮. শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
২৯. শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা এবং তাদের মাদক বা অনুরূপ জিনিস গ্রহণের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link