বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি 

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপগুলোর একটি। এটি পলল মাটি গঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বেও সামান্য পাহাড়ি অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাংশের সীমিত উঁচুভূমি ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশ নদী বিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। 

এদেশের ভূ-প্রকৃতি মূলত নিচু ও সমতল বিশিষ্ট। বাংলাদেশের ভূখণ্ড উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু। ফলে নদ-নদী, উপনদী এবং বিভিন্ন শাখা নদীগুলাে উত্তর দিক হতে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়।

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি কয় ধরনের

ভূপ্রকৃতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-

১। টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ (মােট ভূমির প্রায় ১২%)
২। প্লাইস্টোসিন কালের সােপানসমূহ (মোট ভূমির ৮%)
৩। সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি (মোট ভূমির প্রায় ৮০%)


বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি বৈশিষ্ট্য, azhar bd academy

(১) টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ

ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ভূমিরূপ টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ। আজ থেকে প্রায় ২ মিলিয়ন বছরেরও পূর্বে টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উথিত হওয়ার সময় এ সকল পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উথিত হওয়ার সময় এ সকল পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়গুলাে আসামের লুসাই এবং মিয়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগােত্রীয়। বাংলাদেশের মােট ভূমির প্রায় ১২% এলাকা জুড়ে রয়েছে এই টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ। 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ এ অঞ্চলের আওতাভুক্ত। এ- অঞ্চলের পাহাড়গুলােকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

ক. দক্ষিণ - পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ: রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের এ পাহাড়গুলাের গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম তাজিংডং (বিজয়) যার উচ্চতা ১,২৩১ মিটার বা ৪,০৩৯ ফুট। এটি বান্দরবান জেলায় অবস্থিত।


খ. উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ: ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ, সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে এবং মৌলভীবাজারের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশ,  হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণের পাহাড়গুলো এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এ পাহাড়গুলাের গড় উচ্চতা ২৪৪ মিটারের বেশি নয়।

পূর্বাঞ্চলের উত্তরের পাহাড়গুলাে স্থানীয়ভাবে টিলা নামে পরিচিত। এগুলাের উচ্চতা ৩০ থেকে ৯০ মিটার। বাংলাদেশের বৃহত্তম ও সর্বোচ্চ পাহাড়ের নাম গারাে পাহাড়। এটি ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত।


(২) প্লাইস্টোসিনকালের সােপানসমূহ

উত্তর-পশ্চিমাংশের বরেন্দ্রভূমি, মধ্যভাগের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড় এ অঞ্চলের আওতাভুক্ত। বাংলাদেশের মােট ভূমির প্রায় ৮% এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কে প্লাইস্টোসিন কাল বলা হয়। এ অঞ্চলের উচ্চভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা-


ক. বরেন্দ্রভূমি: নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বরেন্দ্রভূমি গঠিত। বরেন্দ্রভূমির আয়তন ৯,৩২০ বর্গকিলােমিটার। প্লাবন সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। এ স্থানের মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের হয়ে থাকে।

খ. মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়: টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় মধুপুর এবং গাজীপুর জেলায় ভাওয়ালের গড় অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ভাওয়ালের গড় ৪,১০৩ বর্গ কিলােমিটার। সমভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। এ অঞ্চলের মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের।

গ. লালমাই পাহাড়: কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলােমিটার পশ্চিমে লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এ পাহাড়টি বিস্তৃত। পাহাড়টির আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গ কিলােমিটার। এই পাহাড়ের গড় উচ্চতা ২১ মিটার। এ অঞ্চলের মাটির রং লালচে এবং মাটি নুড়ি, বালি ও কংকর মিশ্রিত।


(৩) সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি

টারশিয়ারি এবং প্লাইস্টোসিনকালের ভূপ্রকৃতি ছাড়াও সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ভূমি নদীবিধৌত এবং বিস্তীর্ণ সমভূমি নিয়ে গঠিত। বছরের পর বছর বন্যার সঙ্গে পরিবাহিত মাটি সঞ্চিত হয়ে এ প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। এর আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলােমিটার। সমগ্র সমভূমির মাটির স্তর খুবই গভীর এবং খুবই উর্বর। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ক. পাদদেশীয় অঞ্চল: রংপুর ও দিনাজপুর পাদদেশীয় সমভূমি এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
খ. বন্যা প্লাবন সমভূমি: ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, কুমিল্লা, নােয়াখালী ও সিলেটের অন্তর্গত বন্যা প্লাবন সমভূমি।
গ. ব-দ্বীপ সমভূমি: ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশাের, খুলনা ও ঢাকা অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে ব-দ্বীপ সমভূমি গঠিত।
ঘ. উপকূলীয় সমভূমি: নােয়াখালী ও ফেনী নদীর নিম্নভাগ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হলাে উপকূলীয় সমভূমি।
ঙ. শ্রোতজ সমভূমি: খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চল এবং বরগুনা জেলার কিয়দাংশ নিয়ে শ্রোতজ সমভূমি গঠিত।



Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন