বিশ্বায়ন কাকে বলে? বিশ্বায়নের কারণ

বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক, এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটি একক বিশ্ব সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছে। 

কোল্ড ওয়ার (Cold War) সমাপ্ত হওয়ার পর, বিশ্বায়ন শব্দটি বিশ্ব অর্থনৈতিক এবং তথ্য আদান-প্রদানের দিক দিয়ে পারস্পরিক নির্ভরশীল হওয়ার বর্ণনা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক রোল্যান্ড রবার্টসন সর্বপ্রথম বিশ্বায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।

বিশ্বায়ন কাকে বলে? বিশ্বায়নের কারণ, azhar bd academy


বিশ্বায়নের সংজ্ঞা

বিশ্বায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ধারণা, পণ্য এবং পরিষেবা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বায়নকে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষকে সংযুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।


সাধারণ অর্থে, বিশ্বায়ন বলতে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান একীকরণকে বোঝায়। এই একীকরণ আন্তর্জাতিক সীমানা জুড়ে মানুষ এবং জ্ঞানের চলাচল ছাড়াও সীমান্তের ওপারে পণ্য, পরিষেবা এবং পুঁজির চলাচলে ভুমিকা রেখেছে।

বিশ্বায়ন বিশ্বের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান আন্তঃনির্ভরতাকে বর্ণনা করে যা পণ্য, পরিষেবা, প্রযুক্তি, এবং বিনিয়োগের প্রবাহ, মানুষ এবং তথ্যের আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য দ্বারা সৃষ্ট।

অ্যান্থনি গিডেনস এর মতে, ''বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় যে আমরা সবাই ক্রমবর্ধমানভাবে এক বিশ্বে বাস করি যেখানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং জাতি পরস্পর নির্ভরশীল হয়।''

সমাজবিজ্ঞানী মার্টিন অ্যালব্রো এবং এলিজাবেথ কিং এর মতে, ''বিশ্বায়ন সেই সমস্ত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিশ্বের মানুষ একটি একক বিশ্ব সমাজে অন্তর্ভুক্ত হয়।''



বিশ্বায়নের উদাহরণ

বিশ্বায়নের একটি প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হল বিশ্বে বহুজাতিক কর্পোরেশনের অস্তিত্ব। বহুজাতিক কর্পোরেশন শব্দটি কেবল এমন একটি ব্যবসাকে বোঝায় যা একাধিক দেশে তার কার্যকলাপ পরিচালনা করে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাকডোনাল্ডস এবং কোকাকোলা কোম্পানি।ম্যাকডোনাল্ডস একটি বহুজাতিক ফাস্ট-ফুড কর্পোরেশন যার ১২০ টি দেশ ও অঞ্চলে ৩৭,৮৫৫ টি রেস্তোরা এবং প্রায় ১.৭ মিলিয়ন কর্মচারী রয়েছে। 

বিশ্বায়নের কারণ

বিশ্বায়ন কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিশ্ব অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। যাইহোক, সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণে বিস্তার লাভ করেছে যেমন উন্নত পরিবহন, উন্নত বাণিজ্য, শ্রম বৃদ্ধি, মূলধনের গতিশীলতা এবং উন্নত প্রযুক্তি।


১. উন্নত পরিবহন

উন্নত পরিবহন বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকে সহজ করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিমান ভ্রমণে একটি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে যা সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ এবং পণ্যের বৃহত্তর চলাচল সক্ষম করে তুলেছে। এর মাধ্যমে পরিবহনের খরচ কমেছে, বাণিজ্যকে সহজ এবং আরও দক্ষ করে তুলেছে।

২. উন্নত প্রযুক্তি

উন্নত প্রযুক্তির কারণে বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ এবং তথ্য শেয়ার করা সহজ হয়েছে। কম্পিউটার, মোবাইল, স্যাটেলাইট, ডিস এন্টেনা, ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বকে গতিশীলতা দান করেছে।

৩. বহুজাতিক কোম্পানির বৃদ্ধি

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে বহুজাতিক কোম্পানির বৃদ্ধি ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী ট্রেডিং ব্লকের বৃদ্ধি যা জাতীয় বাধা হ্রাস করেছে যেমন (ইউরোপীয় ইউনিয়ন, NAFTA, ASEAN) হ্রাসকৃত শুল্ক বাধা যা বিশ্ব বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে। 


৪. বৈশ্বিক বাণিজ্য চক্র

দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত যেমন একটি দেশের মন্দা বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। আর্থিক ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমানভাবে বৈশ্বিক প্রকৃতির। আমেরিকার ডলারের মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় তখন বিশ্ব অর্থনীতিতে এটির প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।


৫. পুঁজির উন্নত গতিশীলতা

বিগত কয়েক দশকে, পুঁজির বাধাগুলো সাধারণভাবে হ্রাস পেয়েছে যা বিভিন্ন অর্থনীতির মধ্যে পুঁজির প্রবাহকে সহজ করে তুলেছে। এতে ফার্মগুলোর অর্থ প্রাপ্তির ক্ষমতা বেড়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের বৈশ্বিক আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি করেছে।

৬. শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি

বিশ্বায়নের কারণে মানুষ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। ফলস্বরুপ, বৈশ্বিক রেমিট্যান্স এখন উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

৭. ইন্টারনেট

ইন্টারেটের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থাগুলো বিশ্বস্তরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। যোগাযোগ ছাড়াও ভোক্তারা অনলাইনে পণ্য অর্ডার ও বিক্রয় করতে সক্ষমতা লাভ করেছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষ ঘরে বসে দেশ বিদেশের পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারছে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন