গবেষণা পদ্ধতি কি?
গবেষণা পদ্ধতি (Research Methodology) হল নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কৌশল যা একটি বিষয় সম্পর্কে তথ্য সনাক্ত, নির্বাচন, প্রক্রিয়া এবং বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণা পদ্ধতি হল আপনি যেভাবে আপনার গবেষণা চালাতে চান, তার একটি সুসংগঠিত নিয়ম। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির মতো বিষয়গুলো।
গবেষণা পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল আপনার গবেষণার পদ্ধতির পিছনে যুক্তি ব্যাখ্যা করা, আপনার ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি, বিশ্লেষণের পদ্ধতি এবং আপনার কাজের অন্যান্য মূল বিষয়গুলোকে সমর্থন করা।
আরো পড়ুন, গবেষণার বিভিন্ন প্রকারভেদ
উদাহরণস্বরূপ, একজন গবেষক, তাঁর গবেষণাকর্ম পরিচালনায় নিম্মোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে।
গবেষণা পদ্ধতি
১. কোন ডেটা সংগ্রহ করতে হবে? (গবেষণায় এটিকে ডেটা টাইপ বা কোন ধরণের উপাত্ত ব্যবহার হবে তা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরুপ: প্রাথমিক ডেটা, মাধ্যমিক ডেটা, গুণগত ডেটা, এবং পরিমাণগত ডেটা ইত্যাদি)।
২. কার কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে? (গবেষণায় এটিকে ‘স্যাম্পলিং ডিজাইন’ বলা হয়)
৩. কিভাবে এটি সংগ্রহ করতে হয়? (এটিকে ‘ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতি’ বলা হয়)
৪. কিভাবে এটি বিশ্লেষণ করবেন? (এটিকে ‘ডেটা বিশ্লেষণ পদ্ধতি’ বলা হয়)
১. উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি
গবেষণায় উপাত্ত (Data) ও তথ্য (Information) সংগ্রহের অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। নিম্মে বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হল,
ক. সাক্ষাৎকার (গ্রুপ আকারে বা একের পর এক): আপনি বিভিন্ন উপায়ে সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সাক্ষাৎকার কাঠামোগত, আধা-কাঠামোগত বা অসংগঠিত হতে পারে। পার্থক্য হল সাক্ষাৎকারকারীকে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নগুলোর সেটটি কতটা আনুষ্ঠানিক। একটি গ্রুপ সাক্ষাৎকারে, আপনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত বা উপলব্ধি দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
খ. সমীক্ষা (অনলাইন বা ব্যক্তিগতভাবে): জরিপ বা সমীক্ষা গবেষণায়, আপনি এমন প্রশ্ন উত্থাপন করবেন, যাতে জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির কাছ থেকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া পান।
গ. ফোকাস গ্রুপ: উপরের গ্রুপ ইন্টারভিউয়ের মতো, আপনি প্রদত্ত উত্তরগুলোর একটি নোট তৈরি করার সময় একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা মতামত নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি ফোকাস গ্রুপকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
আরো পড়ুন, গবেষণার বিভিন্ন ধাপ সমূহ
ঘ. পর্যবেক্ষণ: মানুষের আচরণের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তবে এটি গবেষণায় ব্যবহার করার জন্য একটি ভাল গবেষণা পদ্ধতি। এই গবেষণার বিভিন্ন উপায়ে অংশগ্রহণকারীদের তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের অধ্যয়ন অন্তর্ভুক্ত। পর্যবেক্ষণ হল একটি নির্দিষ্ট সময় এবং স্থানে পরিচালিত গবেষণা, যেখানে গবেষকরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
২. গুণগত, পরিমাণগত, এবং মিশ্র গবেষণা পদ্ধতি
তিনটি ভিন্ন ধরণের গবেষণা পদ্ধতি রয়েছে যেমন,
১. গুণগত গবেষণা
যে গবেষণার প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরাসরি পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ, আলোচনা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়, যার সব ই অ-গাণিতিক বা অপরিমাপযোগ্য, তাকে গুণগত গবেষণা বলে। গুণগত গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ধারার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি।
গুণগত গবেষণা করা হয় মূলত কোনো কিছু সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে, তুলনা করতে বা কখনো কখনো সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য। গুণগত গবেষণার ফলাফল গাণিতিক উপায়ে বা পরিসংখ্যানভাবে প্রকাশ করা যায় না।
২. পরিমাণগত গবেষণা
যে গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত সবসময় সংখ্যাসূচক হয় এবং যা গাণিতিক ও পরিসংখ্যাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়, তাকে পরিমাণগত গবেষণা বলে।
পরিমাণগত গবেষণা একটি গবেষণা পদ্ধতি যা পরিসংখ্যানগত, যৌক্তিক এবং গাণিতিক কৌশল ব্যবহার করে সংখ্যাসূচক তথ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বা সমস্যা সমাধান করতে ব্যবহৃত গবেষণা পদ্ধতি।
আরো পড়ুন, ফুটনোট লেখার নিয়ম
৩. মিশ্র গবেষণা
এই পদ্ধতি উপরের উভয় পন্থাকে (গুণগত ও পরিমাণগত) একত্রিত করে ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। পরিমাণগত পদ্ধতি আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য এবং পরিসংখ্যান প্রদান করবে, যেখানে গুণগত পদ্ধতি আপনার গবেষণাকে একটি আকর্ষণীয় মানবিক দিক প্রদান করবে।
৩. তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি
গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগ্রহীত তথ্যসমূহের সংকেতায়ন, বিন্যাস, শ্রেণি সরলীকরণ ও ব্যাখ্যাকরণের প্রক্রিয়াকেই তথ্য বিশ্লেষণ বলা হয়। জরিপ, জনসংখ্যাগত তথ্য, অভীক্ষণের ফলাফল পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, নথি, ব্যক্তির কথোপকথন, জার্নাল, দিনপঞ্জি ইত্যাদি হতে পারে তথ্যের ও উপাত্তের মূল উৎস। গবেষণায় উপাত্ত সংগ্রহের পর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে এগুলো বিশ্লেষণ করা। উপাত্তের সঠিক বিশ্লেষণের দ্বারাই কার্যকরী গবেষণা সম্পন্ন হতে পারে।
উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, সতর্কতা, নিষ্ঠা ও বিশ্লেষণী মন। এর জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি ও ধাপ অনুসরণ করতে হয়। উপাত্ত বিশ্লেষণের লক্ষ্য হলো অনুমিত সিদ্ধান্ত যাচাইকরণ এবং প্রস্তাবিত সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধান। উপাত্ত বিশ্লেষণের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদ্ধতি হলো:
ক. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি : তথ্যের প্রকৃতি, অবস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই।
খ. অন্তদর্শন পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে গবেষক তথ্য বিশ্লেষণে তার পূর্ব অনুমানের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যকে যাচাই করেন এবং অন্তদর্শনের মাধ্যমে সাজিয়ে শ্রেণিকরণ ও বিশ্লেষণ করে থাকেন।
গ. পরীক্ষণ পদ্ধতি : পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলকে ধরে রাখা হয় আর সংগৃহীত অবান্তর তথ্য আপনা আপনি বাতিল হয়ে যায়।
ঘ. পরিসংখ্যান পদ্ধতি : গবেষণার জন্য প্রাপ্ত তথ্যকে পরিসংখ্যান বিষয়ের আলোকে সজ্জিত, একত্রিত ও বিন্যাস করা।
উপাত্ত বিশ্লেষণের কিছু ধাপ রয়েছে। উপাত্ত পাঠ, প্রকৃতি চিহ্নিতকরণ, শ্রেণিকরণ ও বিন্যাস, উৎস ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই, সংশ্লিষ্টকরণ, সংগঠন ও উপস্থাপক, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, বিশ্লেষণ প্রাপ্ত তথ্য একত্রিতকরণ, প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অনুমিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সাধারণ সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হওয়া ইত্যাদি। এ ধাপগুলো স্বতঃসিদ্ধ নয় তথাপি এগুলো সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন, প্রাইমারি ডেটা কি? প্রাইমারি ডেটার উৎস
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link