পদ্মা সেতু
পদ্মা বহুমুখী সেতু হল গঙ্গার প্রধান শাখা পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক-রেল সেতু যা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন। সেতুটি মুন্সীগঞ্জকে শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরের সাথে সংযুক্ত করে, এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প সমূহের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। এটি দ্বি-স্তরের ইস্পাত ট্রাসের উপর নির্মিত যার উপরের স্তরে একটি চার লেনের মহাসড়ক এবং নীচের স্তরে একটি একক-ট্র্যাক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা নদী পৃথিবীর উত্তাল বা খরস্রোতা নদীগুলোর মধ্যে একটি। জলপ্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর এই নদীটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এত উত্তাল নদীর ওপর আর কোনো সেতু এই পর্যন্ত নির্মিত হয়নি।
পদ্মায় পানির প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে ১.৪০ লাখ ঘনমিটার এবং এমন উত্তাল নদীর ওপর সেতু নির্মাণ অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেতুটি ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে নদীর উভয় পাড়ের কাজের উদ্বোধন করেন। তিনি শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে নদী প্রশিক্ষণের কাজ এবং মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ৭ নম্বর পিলারের কাজের উদ্বোধন করেন। সম্পূর্ণ বাংলাদেশী অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো নির্মাণের কাজটি হাতে নেওয়া সত্যিই সাহসিকতার কাজ ছিল।
পদ্মা সেতুর ব্যয়
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০০৭ সালে ১০,০০০ কোটি টাকার (১.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি বাজেটের প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে পরিসংখ্যানটি দুবার সংশোধন করা হয় এবং অবশেষে এখন ব্যয় ৩০,১৯৩ কোটি (৩০১.৯৩ বিলিয়ন ডলার)।
সেতুর পাইলের সর্বোচ্চ গভীরতা ১২২ মিটার, যা অন্য সব সেতুর মধ্যে সর্বোচ্চ। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ
পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১০,৬৪২ কিলোমিটার। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং রেলপথ ০.৫৩২ কিলোমিটার। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
অর্থনৈতিক প্রভাব: পদ্মা সেতুটি নির্মাণ হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যেমন,
১. দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ২ থেকে ৪ ঘণ্টা কমে যাবে।
২. রাজধানীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কাঁচামাল সরবরাহ এবং শিল্পায়ন সহজতর করতে সহায়তা করবে।
৩. ২১টি জেলায় গড়ে উঠবে ছোট-বড় শিল্প। কৃষির ব্যাপক উন্নতি হবে। কৃষকরা পণ্যের দাম ভালো পাবেন এবং ফলে উৎপাদন বাড়বে।
৪. দক্ষিণের জেলা সমূহের বার্ষিক জিডিপি ২.০ শতাংশ এবং দেশের সামগ্রিক জিডিপি ১.০ শতাংশের বেশি বাড়াতে সাহায্য করবে।
৫. সেতুটি নির্মাণের ফলে দেশের সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর উন্নতি হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে (N-8) এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে।
৬. ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকবে। সেতুর দুই পাশে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও বেসরকারি শিল্প শহর। ফলস্বরুপ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
৭. মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নতুন উদ্দমে চালু থাকবে।
৮. পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার, মাওয়া ও জাজিরায় পুরনো-নতুন রিসোর্টসহ নতুন-পুরনো পর্যটনকেন্দ্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
৯. যানবাহনের সংখ্যা প্রতি বছর ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ৬৭ হাজার যানবাহন চলাচল করবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link