ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তি কি
১৬৪৮ সালের ২৪ অক্টোবর, জার্মানির ওয়েস্টফেলিয়া নামক স্থানে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৬৪৮ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির ফলে ৩০ বছরব্যাপী যুদ্ধের সমাপ্ত হয়। ইউরোপের ইতিহাসে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্দের বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৬১৮ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত ভয়ানক যুদ্ধ বিরাজমান ছিল। যুদ্ধটি প্রথম অবস্থায় খ্রিস্ট ধর্মের দুটি সম্প্রদায়ের বিরোধকে কেন্দ্র করে বোহেমিয়ায় শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি কালক্রমে সমগ্র ইউরোপের প্রায় ছোট বড় রাজ্য ও রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ছিল।
ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির ফলাফলস্বরুপ সর্বপ্রথম বিশ্বে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণা, আন্তর্জাতিক আইন এবং বিশ্ব এক কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।
ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের কারণ
Westphalia চুক্তি ১৬১৮ সালে শুরু হয়েছিল যখন অস্ট্রিয়ান হ্যাবসবার্গ বোহেমিয়াতে তাদের প্রোটেস্ট্যান্ট প্রজাদের উপর রোমান ক্যাথলিক ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রধানত ধর্মীয় অসন্তোষের কারণে যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টান্দের দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্টদের পারস্পরিক বিবাদের ফলে যুদ্ধটি সংগঠিত হয়।
ষোড়শ শতাব্দিতে জার্মানিতে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খ্রিস্টানদের এ দুটি সম্প্রদায়ের চরম অনমনীয় ও আপোষহীন তিক্ত মনোভাবের কারণে আত্মঘাতী এ-ধর্মীয় যুদ্ধ বিস্তার লাভ করে। কিন্তু কালক্রমে যুদ্ধটি রাজনৈতিক সংঘর্ষে পরিণত হয় এবং পুরো ইউরোপে এর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন, শেনজেন চুক্তি কী? ইতিহাস ও দেশসমূহ
ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি
ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তি হল ইউরোপে ধর্ম এবং রাজনীতি নিয়ে ১৬১৮ সাল থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি। ঐতিহাসিক চুক্তিটি ১৬৪৮ সালের ২৪ অক্টোবর, জার্মানির ওয়েস্টফেলিয়া নামক স্থানে স্বাক্ষরিত হয়। ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৬৪৮ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির ফলে ৩০ বছরের যুদ্ধ সমাপ্ত হয়।
ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অর্থাৎ স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইডেন, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ডসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মধ্যে। এসব দেশ প্রায় ৩০ বছর যাবত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। এ যুদ্ধে প্রায় ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক লোক হতাহত হয়। মূলত যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি স্থাপনই এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল।
ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মোট ৩টি প্রধান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যথা-
১. মিন্সের চুক্তি (নেদারল্যান্ডস বনাম স্পেন)
২. মুনস্টার চুক্তি (রোমান সাম্রাজ্য বনাম ফ্রান্স)
৩. অসনাব্রুক চুক্তি (রোমান সাম্রাজ্য বনাম সুইডেন)
আরো পড়ুন, জেনেভা কনভেনশন কি? প্রেক্ষাপট ও শর্তসমূহ
ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির ফলাফল
- ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। এ-শান্তি চুক্তির ফলে ইউরোপে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয় এবং জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্মে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হল।
- রাষ্ট্রসমূহ পরস্পরের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
- অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। একটি রাষ্ট্র অন্য আরেকটি রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
- রাষ্ট্রের আইনগত সম অধিকার প্রতিষ্ঠা।
- আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্ভব হয়েছিল। ফলে, ইউরোপীয় দেশগুলো পারস্পরিক যোগাযোগ, রীতিনীতি, এবং চুক্তি ইত্যাদি ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। যার ফলে, সেই সময় থেকে বিদেশী রাষ্ট্রসমূহে স্থায়ী দূতাবাস গড়ে ওঠে।
- পাস্পরিক বন্ধুত্ব এবং বৈশ্বিক শান্তির অঙ্গীকার।
- ধর্ম ও নৈতিক প্রভাবের সমাপ্তি ঘটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের শুরু করে।
- অস্ট্রিয়ার ক্ষমতাকে হ্রাস করে ফ্রান্স বুরবো রাজবংশের নেতৃত্বে ইউরোপে বৃহত্তর দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়।
- নতুন কয়েকটি রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।
- একটি দেশের সাথে অন্য একটি দেশের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি, আইন কানুন প্রণয়নের পথ তৈরি করে।
- মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদ বিস্তার লাভ করে। প্রতিটি ব্যক্তি অপর ধর্মীয় ব্যক্তিকে সম্মান দিতে শুরু করে।
- ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তির পর, ১৬৫৯ সালে ফ্রান্স ও স্পেন পিরেনিজে শান্তি চুক্তি সম্পাদান করে। এভাবে ইউরোপে শান্তির নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link