মুদ্রাস্ফীতি কি? মুদ্রাস্ফীতির কারণ

মূদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিতে একাধারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে নগদ অর্থের সুযোগ ব্যয় কমে যায় এবং মানুষ নগদ অর্থের সঞ্চয়ের বদলে তা খরচ করে ফেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। এর ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়ের অভাবে ভোগে এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে আসে। 

এছাড়াও মুদ্রাস্ফীতির ফলে সাধারণ আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে আসে। অপরদিকে ইতিবাচক প্রভাবগুলো হল পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হয়। যার ফলে অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ঠি হয় এবং যার মাধ্যমে নতুন উপভোক্তা তৈরী হয়।

সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া যায়। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।

মুদ্রাস্ফীতি কি

মুদ্রাস্ফীতি বলতে অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধিকেই বোঝানো হয়। অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে এবং পণ্য ও সেবার সরবরাহ অপরিবর্তিত থাকলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। কারণ অনেক বেশি টাকা সীমিত পণ্য ও সেবার পেছনে ধাওয়া করে। এতে চাহিদা ও মূল্যস্তর দুটিই বেড়ে যায়। শাস্ত্রীয় ও আভিধানিক অর্থেও মুদ্রাস্ফীতির অর্থ সব ধরনের পণ্য ও সেবামূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি, যা সাধারণত ঘটে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের কারণে, যাতে অর্থের মূল্য হ্রাস পায়।

মুদ্রাস্ফীতি কি? মুদ্রাস্ফীতির কারণ, azhar bd academy

অর্থনীতিবিদ কেমারার এর মতে ‘‘যখন দেশে মোট মুদ্রার যোগান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করে তখন মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।’’

নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ও সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া যায়। 


মুদ্রাস্ফীতির কারণ

মুদ্রাস্ফীতি প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে যথা- চাহিদা (Demand) এবং মূল্য (Cost) জনিত কারণে। 

যখন কোন পণ্যের চাহিদা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়ে তখন "চাহিদা জনিত" কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে পণ্যের সরবরাহ ব্যয় বেড়ে গেলে মূল্য জনিত মূল্যবৃদ্ধি হয়। 

১. চাহিদা জনিত মূদ্রাস্ফীতি

চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের সবচেয়ে বড় কারণ। চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি তখনই ঘটে যখন পণ্য বা পরিষেবার জন্য ভোক্তার চাহিদা এত বেশি বেড়ে যায় যে এটি সরবরাহের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যে সমস্ত পরিস্থিতি চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে -
  • যখন মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে এবং এরফলে তার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
  • কালোবাজারি যত হবে জিনিসের দাম তত বাড়ে।
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
  • সরকারের খরচ বৃদ্ধি। এরফলে সেই টাকাটা জনগণের পকেটে আসে।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ভর্তুকি দিলে জিনিসের দাম বাড়ে।
  • সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্যিক ঋণ বাড়লে।
মুদ্রাস্ফীতি মানে অনেক টাকা বাজারে ঘুরছে। সেক্ষেত্রে (ডলারের সাপেক্ষে) টাকার দাম কমবে। সুতরাং, গ্রাহকরা যখন অতিরিক্ত ব্যয়যোগ্য অর্থ আয় করেন তখন চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। মানুষের হাতে ব্যয় করার জন্য অতিরিক্ত অর্থের যোগান থাকলে তখন মানুষ আরও পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয় করতে চায় এবং তাদের সেই ক্ষমতা থাকে।

২. মূল্য জনিত মূদ্রাস্ফীতি

বাজারে যখন কোন পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হয় এবং তার সঙ্গে যৌথভাবে পণ্যের সরবরাহে প্রভূত ঘাটতি দেখা দেয়, তখন সেই পরিস্থিতিতে প্রস্তুতকারককে পণ্য বা পরিষেবার দাম বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি করে দেয় এবং মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। তবে মূল কারণ হলো- যখন কোনো জিনিস তৈরি করতে যে সামগ্রীগুলো লাগে তার দামের যখন বৃদ্ধি পায়, তখন সামগ্রিকভাবে দ্রব্যটির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। 

কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে প্রধানত চারটি বস্তু লাগে, যথা- জমি (Land ), শ্রমিক (Labour), মূলধন (Capital), এবং উদ্যোক্তা (Entrepreneur)। একে আমরা বলি "factors of production" বা উৎপাদনের উপাদান। এই সব মিলিয়ে যে খরচটা হয়, সেটাকে বলে "Factors Cost বা উৎপাদন খরচ"। ফলে এখানে যদি কোনো কিছুর দাম বাড়ে, তাহলে ওই উৎপাদন খরচও বাড়বে। 

পাশাপাশি সেই দ্রব্যটি যখন বাজারে আসে তখন তার ওপর সরকার পরোক্ষ কর আরোপ করে। তারপর সেটার বাজারি মূল্য(মার্কেট প্রাইস) ঠিক হয়। এবার যদি সরকার ট্যাক্স বাড়ায় তাহলেও জিনিসের দাম বাড়বে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ তেলের দাম বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ হতে পারে। খনিজ তেলের দাম বাড়া মানেই ট্রান্সপোর্ট বা পরিবহনের দাম বেড়ে যাওয়া।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়

কোনো দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবং সেই দেশের সরকার একসাথে পরিকল্পনা স্থির করে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা গৃহীত পরিকল্পনাকে বলা হয় আর্থিক নীতি (Monetary Policy) এবং সরকারের দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে বলা হয় " রাজস্ব নীতি (Fiscal Policy)।

যখন মুদ্রাস্ফীতি খুব বেড়ে যায়,অর্থাৎ সাধারণত বাজারে প্রচুর টাকার আগমন ঘটে, তখন ঐ দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক "ব্যাঙ্ক রেট" বাড়িয়ে দেয়। এরফলে অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোও তাদের প্রদেয় বিভিন্ন ঋণের সুদের পরিমান বাড়াতে বাধ্য হয়। এদিকে ব্যাঙ্কগুলোকে বেশি টাকা সুদ দিতে হলে সেইসময় ঋণ নেওয়ার প্রতিও মানুষের চাহিদা কমে। এছাড়া আগেকার ঋণ শোধ করতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়। সবমিলিয়ে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। 

আবার যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ঋণাত্মক অর্থাৎ বাজারে টাকার জোগান কমে যায়, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক "ব্যাঙ্ক রেট" কমিয়ে দেয়। এছাড়া বাজার থেকে গভর্ণমেন্ট সিকিউরিটি কিনে বিনিময়ে নগদ অর্থ প্রদান করে। অন্যদিকে সরকারও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করে। যেমন,অপ্রত্যক্ষ করের জন্য জিনিসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে সরকার করের বোঝা লাঘব করতে পারে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন