খনার বচন
খনার বচন হচ্ছে গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক ছড়া। বিখ্যাত বাঙালি মহিলা জ্যোতিষী খনা রচিত ‘খনার বচন’ মূলত মানুষের জীবনযাপনের বিভিন্ন রীতিনীতি, চাষাবাদ, বৃক্ষরোপণ, গৃহনির্মাণ ইত্যাদি জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে রচিত গ্রন্থ।
তাঁর খনার বচনগুলো প্রধানত ৪ ভাগে বিভক্ত যথা-
১) কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার সম্পর্কিত।
২) কৃষিকাজ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
৩) আবহাওয়া জ্ঞান সম্পর্কিত।
৪) শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।
জনপ্রিয় খনার বচন সমূহ
সর্বাধিক জনপ্রিয় খনার বচন সমূহ দেওয়া হল
১. চৈত্রে দিয়া মাটি
বৈশাখে কর পরিপাটি।
২. ভাদ্রের চারি, আশ্বিনের চারি
কলাই করি যত পারি।
৩. আউশ ধানের চাষ
লাগে তিন মাস।
৪. একে তে নাচুনী বুড়ি,
তার উপর ঢোলের বারি।
৫.দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ।
৬. যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভুলেনা মোরে।
৭. মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
ছেলে নষ্ট হাটে।
৮. তেলা মাথায় ঢালো তেল,
শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল।
৯. নিজের বেলায় আটিঁগাটি,
পরের বেলায় চিমটি কাটি।
১০. তাল বাড়ে ঝোঁপে
খেজুর বাড়ে কোপে।
১১. পুকুরে তে পানি নাই, পাতা কেনো ভাসে
যার কথা মনে করি সেই কেনো হাসে?
১২. পটল বুনলে ফাগুনে
ফলন বাড়ে দ্বিগুণে।
১৩. যদি থাকে বন্ধুরে মন
গাং সাঁতরাইতে কতক্ষণ।
১৪. সমানে সমানে দোস্তি
সমানে সমানে কুস্তি।
১৫. হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা।
১৬. যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ।
১৭. কিল আর তেল পড়লেই গেল।
১৮. ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।
১৯. কাল ধানের ধলা পিঠা,
মা’র চেয়ে মাসি মিঠা।
২০. যুগরে খাইছে ভূতে
বাপরে মারে পুতে।
২১. শোনরে বাপু চাষার পো
সুপারী বাগে মান্দার রো৷
মান্দার পাতা পচলে গোড়ায়
ফড়ফড়াইয়া ফল বাড়ায়।
২২. যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।
২৩. নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
বদ্যি বাড়ি নাহি যাও।
২৪. শুধু পেটে কুল,
ভর পেটে মূল।
২৫. সাত হাতে, তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।
২৬. বারো মাসে বারো ফল
না খেলে যায় রসাতল।
২৭. সকাল শোয় সকাল ওঠে
তার কড়ি না বৈদ্য লুটে।
২৮. যদি হয় সুজন এক পিড়িতে নয় জন।
যদি হয় কুজন নয় পিড়িতে নয় জন।
২৯. যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট
তত জ্বালে ভাত নষ্ট।
৩০. পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল।
য’দ্দিন কুয়া ত’দ্দিন জল।
শনিতে সাত মঙ্গলে/(বুধ) তিন।
আর সব দিন দিন।
৩১. ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
যদি ও পৃথক হয়, নারীর কারন।
৩২. জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা।
৩৩. চৈত্রেতে থর থর
বৈশাখেতে ঝড় পাথর
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।
৩৪. গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল।
৩৫. ভাদ্র আশ্বিনে বহে ঈশান,
কাঁধে কোদালে নাচে কৃষাণ।
৩৬. বাড়ীর কাছে ধান পা,
যার মার আগে ছা।
চিনিস বা না চিনিস,
ঘুঁজি দেখে কিনিস।
৩৭. উনো বর্ষায় দুনো শীত।
৩৮. আউশের ভুই বেলে,
পাটের ভুঁই আটালে।
৩৯. পান লাগালে শ্রাবণে,
খেয়ে না কুলায় রাবণে।
৪০. শীষ দেখে বিশ দিন,
কাটতে কাটতে দশদিন।
ওরে বেটা চাষার পো,
ক্ষেতে ক্ষেতে শালী রো।
৪১. মাঘে মুখী,
ফাল্গুনে চুখি,
চৈতে লতা,
বৈশাখে পাতা।
৪২. বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়,
সে বৎসর বর্ষা হবে খনা কয়।
৪৩. আম লাগাই জাম লাগাই কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল নাচে জড়াজড়ি।
৪৪. মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।।
৪৫. ফাল্গুনে আগুন চৈতে মাটি,
বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।
৪৬. চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়
তাল তেঁতুলের কিবা হয়।
৪৭. হালে নড়বড়, দুধে পানি
লক্ষ্মী বলে চললাম আমি।
৪৮. মঙ্গলে ঊষা বুধে পা
যথা ইচ্ছা তথা যা।
৪৯. পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়
সেই বৎসর বন্যা হয়।
৫০. বিপদে পড় নহে ভয়
অভিজ্ঞতায় হবে জয়।
৫১. নদীর জল ঘোলাও ভালো,
জাতের মেয়ে কালোও ভালো।
৫২. ডাক ছেড়ে বলে রাবণ
কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।
৫৩. জৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।
৫৪. গাছ-গাছালি ঘন রোবে না
গাছ হবে তাতে ফল হবে না।
৫৫. উত্তর দুয়ারি ঘরের রাজা
দক্ষিণ দুয়ারি তাহার প্রজা।
পূর্ব দুয়ারির খাজনা নাই
পশ্চিম দুযারির মুখে ছাই।
৫৬. আষাঢ়ে পনের শ্রাবণে পুরো
ধান লাগাও যত পারো।
৫৭. চৈতে গিমা তিতা,
বৈশাখে নালিতা মিঠা,
জ্যৈষ্ঠে অমৃতফল আষাঢ়ে খৈ,
শায়নে দৈ।
ভাদরে তালের পিঠা,
আশ্বিনে শশা মিঠা,
কার্তিকে খৈলসার ঝোল,
অগ্রাণে ওল।
পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল,
ফাল্গুনে পাকা বেল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link