পঞ্চাশের মন্বন্তর

পঞ্চাশের মন্বন্তর কি?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়েছিল, ইতিহাসে তা ‘‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’’ নামে পরিচিত। এটি ছিল ১৭৭০ সালের ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর, বাংলায় সংঘটিত সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। পঞ্চাশের মন্বন্তরে প্রায়  ৩৮ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মানের মারাত্মক অবনতি ঘটে।

১৩৫০ বঙ্গাব্দে ব্রিটিশ ভারতের বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারত) দুর্ভিক্ষ, যেটি পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। পঞ্চাশের মন্বন্তরে বিশেষ করে অপুষ্টি, জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা এবং স্বাস্থ্য সেবার অবনতি, অনাহার, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগে মারা গেছে অধিকাংশ মানুষ। দুর্ভিক্ষের এই সংকট অর্থনীতির বড় অংশকে ধ্বংস করেছিল, ফলে লক্ষ লক্ষ লোক দরিদ্র হয়ে পড়ে। এছাড়া সামাজিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। 

পঞ্চাশের মন্বন্তর কী, azhar bd academy

দুর্ভিক্ষের বছরগুলোতে পরিবারগুলো একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাড়ি দিতে থাকে, পুরুষরা তাদের খামার বিক্রি করে এবং কাজ খুঁজতে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, মহিলা ও শিশুরা গৃহহীন অভিবাসী হয়ে ওঠে, ত্রাণের সন্ধানে কলকাতা বা অন্যান্য বড় শহরে পাড়ি দিতে লাগলো।

অনেক ঐতিহাসিক পঞ্চাশের মন্বন্তরকে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঔপনিবেশিক নীতির ফলে সংকট আরও বেগে গিয়েছিল। ১৯৪৩ সালে সংগঠিত বাংলার দুর্ভিক্ষের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছিল। ভারতীয় লেখিকা মধুশ্রী মুখার্জি তার চার্চিলস সিক্রেট ওয়ার শীর্ষক বইটিতে এই মত দিয়েছেন। বইটিতে লেখিকা এই দুর্ভিক্ষকে মানবসৃষ্ট বলে নিন্দা করেছেন। বইটিতে তিনি অভিযোগ তোলেন, এই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির পেছনে বর্ণবৈষম্যও কারণ হিসেবে ছিল।

কিন্তু, কেউ কেউ মনে করেন যে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক কারণে হয়েছিল। ১৯৪২ সালে, উপকূল জেলাগুলোতে ব্যাপক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এসব এলাকায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে বাজারে খাদ্য সংকট আরো তীব্র হয়। খাদ্যশস্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে চারদিকে হাহাকার পড়ে যায়। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সরকারের নানা সিদ্ধান্ত এবং ব্যবসায়ীদের চতুরতার কারণে বাজারে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া সেসময় জাপান বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) দখল করে ফলে সেখান থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভিক্ষের আগে যেখানে প্রতি মণ চালের দাম ছিল ছয় টাকা, সেখানে খাদ্য সংকট শুরুর পর প্রতি মণ চালের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১০০ টাকায়। ফলে বাংলার বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনাহারে মারা যায়।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন