ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪ক(১)(ক) অনুযায়ী “ম্যাজিস্ট্রেট” বলতে শুধুমাত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (Judicial Magistrate) বোঝায়।
২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৈরি হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অন্যতম পার্থক্য হলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন আসামিকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেটি পারেন না।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কি
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন আইন প্রয়োগ ও বিচারিক দায়িত্বপালনকারী একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ ফৌজদারি অভিযোগ আমল, গ্রহণ ও বিচার করেন। এছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন করার জন্য যেকোন আদেশ দিতে পারেন। পুলিশ তদন্তসহ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের বিবরণ সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করেন।
বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির (২০০৭ সালে সংশোধিত) ৪ক ধারা অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট বলতে শুধুমাত্র জুডিসিয়াল বা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে অবশ্যই আইন বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে। এরপর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (BJS) পরীক্ষা দিয়ে উত্তীন্ন হতে হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝায়। যারা বিচার করেন তাদেরকে বিচারপতি (সুপ্রিম কোর্টের বিচারক), জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট (প্রতি জেলায় নিম্ন আদালতের বা ট্রাইবুনালের বিচারক) বলা হয়।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রমোশন পেয়ে এক সময়ে জেলা ও দায়রা জজ হন। আবার কেউ কেউ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হন। একটি জেলার সর্বোচ্চ জুডিসিয়াল অফিসার হলেন জেলা ও দায়রা জজ। অন্যদিকে, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন জেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা জেলা প্রশাসকের থেকে অনেক উপরে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৬ অনুযায়ী, উচ্চ আদালত (সুপ্রীম কোর্ট) ব্যতীত দুই শ্রেনীর ফৌজদারী আদালত থাকবে। (১) দায়রা আদালতসমূহ (২)ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ আবার দুইভাগে বিভক্ত যেমন, মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেট।
ক. মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট
১। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
২। অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
৩। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
বিদ্র: মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গণ্য হবেন।
খ. মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেট
১। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
২। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৩। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৪। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
বিদ্র: জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়েছে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার যোগ্যতা
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে অবশ্যই আইন বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে। এরপর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (BJS) পরীক্ষা দিয়ে উত্তীন্ন হতে হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী কমিশনার (প্রশাসন) যেকোন সাবজেক্টে পড়ে হওয়া যায়, তবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে অবশ্যই আইনের ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বিজেএস পরিক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা
১. চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন।
২. ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯(গ) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শক্রমে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে মৃত্যুদন্ড ছাড়া সকল অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে।
৩. মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট নির্জন কারাবস সহ ৫ বছরের অনধিক কারাদন্ড দিতে পারবেন এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
৪. সেকেন্ড ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট নির্জন কারাবাস সহ ৩ বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
৫. থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক ২ বছরের সাজা এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
৬. কোন আসামী যদি জরিমানার টাকা দিতে অপারগ হন সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট টাকা অনাদায়ের জন্য আসামিকে দণ্ডদানের তার যে ক্ষমতা আছে তার এক-চতুথাংশের বেশি দিতে পারবে না। (ধারা-৩৩)
৭. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) সি ধারা অনুযায়ী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোনো অভিযোগ ছাড়াই স্বত:প্রণোদিতভাবে যেকোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন।
৮. আদালতে কেউ গুরুতর অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলে সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারা অনুযায়ী এজাহার হিসেবে রুজু করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারেন।
৯. বাংলাদেশের সংবিধান এর ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপন করবে।
১০. জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গুরুতর বা সূত্রবিহীন অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক ১৫ দিন পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দিতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link