ম্যাজিস্টেট কাকে বলে?
ম্যাজিস্ট্রেট হলেন একজন সিভিল অফিসার যার কাছে আইন পরিচালনা ও প্রয়োগ করার ক্ষমতা। এছাড়া তার সীমিত বিচারিক ক্ষমতাও রয়েছে।
আইন পরিচালনা ও প্রয়োগ করার সীমিত কর্তৃত্ব সহ একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বলে।
Magistrate শব্দটি ল্যাটিন Magistratus শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ শাসক (Administrator)। বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির (২০০৭ সালে সংশোধিত) ৪ক ধারা অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট বলতে শুধুমাত্র জুডিসিয়াল বা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝায়।
ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রকারভেদ
ধারা ৬(২), কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (CrPC), ১৮৯৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দুই শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আছে। যথা: (ক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং (খ) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
১. নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নির্বাহী অঙ্গের ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রশাসনিক পরিষেবার সদস্যরা হলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা সাধারণত তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারে নির্বাহী এবং সীমিত বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদ হলো সহকারী কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট নয়। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫) অনুযায়ী সরকার চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকে সীমিত আকারে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। তখন তাদেরকে বলা হয় “নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট”।
বাংলাদেশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং খাদ্যে ভেজাল, ইভ-টিজিং, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে এবং উচ্ছেদের মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূর করে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত (ধারা-৫; মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯) পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০০০ টাকা সমপরিমাণ যোগ্য অপরাধের বিচার করতে পারেন। এই বিচারের শর্ত হল উক্ত অপরাধমূলক কাজ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত বা উদঘাটিত হতে হবে এবং অভিযুক্ত কর্তৃক তার কৃত অপরাধ লিখিতভাবে স্বীকার করতে হবে। যদি তা না হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে কোনো দণ্ড দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তিনি অভিযুক্তকে পুলিশের মাধ্যমে আদালতে চালান করবেন। (ধারা-৬, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯)।
২. জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
বাংলাদেশে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা সব ধরনের ফৌজদারি মামলার বিচার করেন। বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের চারটি শ্রেণি রয়েছে যারা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
(১) চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
(২) অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
(৩) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট
(৪) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
মেট্রোপলিটন এলাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন স্তরের ম্যাজিস্ট্রেটগণ হচ্ছেন:
(১) চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
(২) অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
(৩) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট
ক্ষমতা প্রয়োগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা:
প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট,
দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং
তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।
মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রত্যেক জেলায় একজন ডেপুটি কমিশনার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এবং জয়েন্ট ডেপুটি কমিশনার জয়েন্ট ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ভোগ করে।
এদের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রত্যেক জেলায় প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
একজন প্রথম শ্রেণী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট একটি উপজেলা/থানার দায়িত্বে বহাল থাকেন। এ-ধরনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে উপজেলা/থানা ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়। তিনি ঐ থানার যেকোন অংশে সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন। সরকার যে-কোন ম্যাজিস্ট্রেটকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করতে পারে।
মেট্রোপলিটন এলাকার বা তার যেকোন অংশে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য সব মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে থাকেন এবং তিনিই অধীনস্থ ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link