বাজেট কি
বাজেট (Budget) হল একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের সমষ্টি এবং সেগুলো কীভাবে পূরণ করা যায় তার প্রস্তাব সহ অভীষ্ট ব্যয়ের সারাংশ। অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট অর্থ বছরের সম্ভাব্য সরকারি আয় ও ব্যয়ের হিসাব নিকাশকে বাজেট বলে।
বাজেট হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের (প্রায়শই এক বছর) জন্য করা একটি আর্থিক পরিকল্পনা। এতে পরিকল্পিত বিক্রয়ের পরিমাণ এবং রাজস্ব, সম্পদের পরিমাণ, খরচ এবং ব্যয়, সম্পদ, এবং নগদ প্রবাহ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি, সরকার, পরিবার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বাজেট বরাদ্দ করে।
বাজেট (Budget) শব্দটি এসেছে পুরাতন ফরাসি শব্দ বুগেট (bougette) থেকে যার অর্থ "ছোট চামড়ার পার্স", বা "চামড়ার থলি। আগেরকার দিনে, সরকারের অর্থ দফতরের কর্মকর্তারা আর্থিক বিবৃতি দেওয়ার জন্য একটি চামডার থলের (পার্স) মধ্যে হিসেব নিকাশের কাগজপত্র বহন করত। আর্থিক পরিকল্পনা সম্পর্কে বোঝার ক্ষেত্রে বাজেট শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন উইলিয়াম পুল্টেনি। ওয়াইন (মদ) এবং তামাক সম্পর্কিত সরকারের আর্থিক নীতির বর্ণনা ও সমালোচনা করার জন্য তিনি এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। উপমহাদেশে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন লর্ড ক্যানিং (১৮৬১)।
বাংলাদেশে প্রত্যেক অর্থবছরে সরকার ভবিষ্যত আয় ব্যয়ের বাজেট ঘোষণা করে। সাধারণত পহেলা জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থবছর। বাংলাদেশের বাজেটের ধরন হচ্ছে ঘাটতি বাজেট। ১৯৭২ সালে ৩০ জুন, বাংলাদেশে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রি তাজউদ্দিন আহম্মেদ।
বাজেট এর প্রকারভেদ
বাজেটকে প্রথমত দুইভাগে ভাগ করা হয় যেমন, সুষম বাজেট এবং অসম বাজেট।
সুষম বাজেট: সরকারের মোট আয় ও মোট ব্যয় সমান হলে সেটি হচ্ছে সুষম বাজেট। মানে সরকারের মোট ব্যয় পরিকল্পনার সমানই হচ্ছে সম্ভাব্য আয়।
অসম বাজেট: যেখানে আয় ও ব্যয় সমান হয় না। অসম বাজেট আবার দুই প্রকার যেমন উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট। সম্ভাব্য ব্যয়ের তুলনায় আয় যদি বেশি হলে সেটি উদ্বৃত্ত বাজেট। ঘাটতি বাজেট হচ্ছে ঠিক উল্টোটা। এখানে ব্যয় বেশি, আয় কম।
আয় ব্যয়ের প্রকৃতি অনুসারে বাজেট ২ প্রকার যেমন রাজস্ব বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট।
১. রাজস্ব বাজেট
অভ্যন্তরীণ আয় থেকে সরকার তার কার্যাবলী ও আবশ্যকীয় সেবা প্রদানে যে ব্যয় নির্বাহ করে তার হিসাব বিবরণী থাকে রাজস্ব অংশে। বাজেটে সরকারের এই রাজস্ব আয় ও রাজস্ব ব্যয়ের যে হিসাব প্রতিফলিত হয় তাকে রাজস্ব বাজেটও বলা হয়। রাজস্ব বাজেট দুধরণের হয়ে থাকে যেমন রাজস্ব আয় ও রাজস্ব ব্যয়।
ক. রাজস্ব আয়: রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের উৎসগুলোকে প্রথমত তিন ভাগে ভাগ করা যায় যেমন: প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং করবহির্ভূত আয়। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে আছে ব্যক্তির আয়কর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর কর অর্থাৎ করপোরেট কর, দান কর, উত্তরাধিকার কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কর হচ্ছে আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি।
কর ছাড়াও রাষ্ট্রের আরও কিছু আয়ের উৎস আছে। যেমন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ, সুদ, প্রশাসন থেকে আয়, ডাক ও টেলিফোন থেকে আয়, পরিবহন আয়, জরিমানা ও দণ্ড থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, এবং টোল থেকে আয় ইত্যাদি।
খ. রাজস্ব ব্যয়: রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে সরকার পরিচালনার যাবতীয় খরচ। এটিকে অনুন্নয়ন বাজেটও বলা হয়। রাজস্ব ব্যয় মোটা দাগে তিনটি সেক্টরে নির্বাহ করা হয় যেমন দেশরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক খরচ।
এছাড়া নানা ধরনের সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয়। আবার কৃষি ও জ্বালানির মতো খাতে সরকার ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ এই সবই রাজস্ব ব্যয়। তবে, সবচেয়ে বড় খরচের খাত হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতন-ভাতা।
২. উন্নয়ন বাজেট
বাজেটে উন্নয়ন অংশে থাকে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যে ব্যয় ধরা হয় তার হিসাব বিবরণী।
সরকার ব্যয় নির্বাহ করার পর বাকি অর্থ দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে। এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প যেমন রাস্তা নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, গ্রামীণ উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি, এবং হাসপাতাল তৈরিসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link