নৈতিকতা কি?
ইংরেজি Ethics শব্দটি গ্রীক শব্দ "ethos" থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ "জীবনযাত্রার উপায়"। নীতিশাস্ত্র হল দর্শনের একটি শাখা যা মানব আচরণের সাথে সম্পর্কিত, বিশেষভাবে সমাজে ব্যক্তির আচরণের সাথে সম্পর্কিত। নীতিশাস্ত্র আমাদের নৈতিক বিচারের যৌক্তিক ন্যায্যতা পরীক্ষা করে। এটি নৈতিকভাবে সঠিক বা ভুল, ন্যায় বা অন্যায় অধ্যয়ন করে।
জোনাথান হেইট মনে করেন, “ধর্ম, ঐতিহ্য এবং মানব আচরণ তিনটি থেকেই নৈতিকতার উদ্ভব। নৈতিক কর্তব্য ব্যক্তি ও সমাজের নীতিবোধের উপর নির্ভরশীল। কোনো ব্যক্তি নৈতিক কর্তব্য পালন না করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে না। তবে এ জন্য তাকে সামাজিক ভৎসনা ও সমাজ কর্তৃক নিন্দনীয় হতে হয়।
নৈতিকতা আমাদেরকে সত্য বলতে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বা প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করার জন্য প্ররোচিত করে। মানুষের জীবনে নৈতিকতার অন্তর্নিহিত একটি কাঠামো থাকে, যা আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যা ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে এবং অন্যায় কাজ থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়।
নৈতিকতার সংজ্ঞা
নীতিশাস্ত্র হলো নীতি বা নিয়মের একটি সেট যা একটি নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামোর মধ্যে একজন ব্যক্তির নৈতিক কার্যাবলীকে নির্দেশ করে। এছাড়া এটি নৈতিক বিচার এবং নৈতিক সিদ্ধান্তে মানুষের আচার- আচরণের মানদন্ড নির্দেশ করে।
নৈতিকতা (Ethics) হলো কতিপয় বিধান যার আলোকে মানুষ তার বিবেকবোধ ও ন্যায়বোধ ধারণ ও প্রয়োগ করে থাকে।
“নৈতিকতা হল সেই শৃঙ্খলা যা ভাল এবং মন্দের সাথে মোকাবিলা করে এবং নৈতিক দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার সাথেও আচরণ করে। নৈতিকতা হল নৈতিক নীতি বা মূল্যবোধের একটি সেট।" - ক্যারল বুচহোল্টজ
নৈতিকতা (Ethics) হল সঠিক এবং ভুল আচরণের বিধান। নৈতিকতা আমাদের বলে যে আমাদের আচরণ কখন নৈতিক এবং কখন নৈতিক না।
নৈতিকতা সেই মানদন্ড সমূহকে বোঝায় যা ধর্ষণ, চুরি, খুন, আক্রমণ, অপবাদ এবং জালিয়াতি থেকে বিরত থাকার যুক্তিসঙ্গত বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সততা, সহানুভূতি এবং আনুগত্যের গুণাবলী নির্দেশ করে এমন নৈতিক মানগুলিও অন্তর্ভুক্ত করে।
Cambridge Dictionary তে বলা হয়েছে যে, ‘‘নৈতিকতা হলো ভালো-মন্দ আচরণ, স্বচ্ছতা, সততা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি গুণ যা প্রত্যেক ব্যক্তিই আইন কিংবা অন্য কোনো বিষয়ের থেকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।’’
নৈতিকতার প্রকারভেদ
নৈতিকতার প্রকারের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত নৈতিকতা, সামাজিক নৈতকতা, ধর্মীয় নৈতিকতা এবং ব্যবসায়িক নৈতিকতা।
১. ব্যক্তিগত নৈতিকতা: ব্যক্তিগত নৈতিকতা হল এমন যে কোনও ব্যবস্থা যা কোনও নির্দিষ্ট জীবনধারায় নৈতিক নির্দেশিকা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি একজন ব্যক্তিকে ধর্ষণ, চুরি, খুন, আক্রমণ, অপবাদ এবং জালিয়াতি থেকে বিরত থাকার যুক্তিসঙ্গত বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এছাড়া সততা, সহানুভূতি এবং আনুগত্যের গুণাবলী নির্দেশ করে এমন নৈতিক মানগুলিও অন্তর্ভুক্ত করে।
২. সামাজিক নৈতিকতা: ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য এবং ব্যক্তির অধিকারের মতো বিষয়গুলিতে সমাজের সদস্যরা কীভাবে একে অপরের সাথে আচরণ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক নৈতিকতা। সমাজ বা সম্প্রদায়ের রীতিনীতি এবং নিয়মের উপর ভিত্তি করে এটি গঠিত হয়।
৩. ধর্মীয় নৈতিকতা: বেশিরভাগ ধর্মের একটি নৈতিক উপাদান রয়েছে, যা প্রায়শই অতিপ্রাকৃত বা নির্দেশিকা থেকে উদ্ভূত হয়। যেমন মুসলমানদের কোরআন, হিন্দুদের বেদ, খ্রিস্টানদের বাইবেল ইত্যাদি। এসকল ধর্মীয় গ্রন্থ সেসকল জাতির বা ধর্মীর সম্প্রদায়ের একটি নীতিশাস্ত্র হিসেবে কাজ করে।
৪. ব্যবসায়িক নৈতিকতা: ব্যবসায়িক নৈতিকতা হল ব্যবসায় ভাল এবং মন্দ, সঠিক এবং ভুল এবং ন্যায় ও অন্যায় কর্মের অধ্যয়ন। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নৈতিক ঐতিহ্যগুলি সত্যকথন, সততা, জীবনের সুরক্ষা, অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা এবং আইনের প্রতি আনুগত্য সমর্থন করে।
আরো পড়ুন, সুশাসন কি? সুশাসনের সংজ্ঞা ও উপাদান
নৈতিকতার প্রকৃতি
নৈতিকতার প্রকৃতি বলতে মানুষের আদর্শ আচরণবিধির সাথে সম্পর্কিত আচরণের আদর্শিক মানকে বোঝায়। এটি আমাদের অনুভূতি থেকে যথেষ্ট ভিন্ন। নৈতিক পছন্দগুলি আমাদের অনুভূতি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়।
ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত: নৈতিকতার প্রকৃতি ধর্মের প্রভাবের সাথে যুক্ত হতে পারে না। নৈতিকতা একটি সাধারণ নিয়মের মতো যা ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য। যদিও বেশিরভাগ ধর্মই উচ্চ স্তরের নৈতিক মানদণ্ডের পক্ষে।
আইন থেকে পৃথক: নৈতিকতা আইন থেকে পৃথক হয়। যদিও আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারীরা নৈতিকতাকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে। তবে এটি পরবর্তীকালে নৈতিক নির্দেশিকা থেকে বিচ্যুত হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ স্বৈরাচারী শাসন অতীতে আইনি ব্যবস্থাকে কলুষিত করার জন্য কুখ্যাত।
আদর্শিক বিজ্ঞান: নীতিশাস্ত্র একটি আদর্শিক বিজ্ঞান যা একজন ব্যক্তির মধ্যে নিয়ম, নৈতিক মূল্যবোধ এবং একজন ব্যক্তির চরিত্র নির্ধারণ করে। এটি কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল তার একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যাখ্যা দেয়।
শিল্প নয়: নৈতিকতা শিল্প নয় কারণ শিল্প বস্তু তৈরি করার দক্ষতা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে নৈতিকতা প্রেরণা, ইচ্ছা, উদ্দেশ্য এবং পছন্দের সাথে সম্পর্কিত যা ভাল বা ভুল বলে বিবেচিত হয়।
পরিবর্তনশীল: নীতিশাস্ত্র স্থির নয়। এটা সবসময় এক হয় না। মানুষ পরিবর্তিত হয় এবং তাদের নৈতিকতা এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হয়।
মানুষের জন্য: নৈতিকতা শুধুমাত্র মানুষের জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমরা প্রাণীদের কাছ থেকে নৈতিক আচরণ আশা করতে পারি না, কারণ তারা মানুষের মতো বুদ্ধিমান নয় তাই নৈতিকতা শুধুমাত্র মানুষের জন্য।
আরো পড়ুন, অধিকার কি? অধিকারের সংজ্ঞা ও প্রকার
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link