বিল কি?
সংসদে উত্থাপিত আইনের খসড়া বা প্রস্তাবকে বিল বলে। অর্থাৎ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবকৃত খসড়া বা অনুচ্ছেদকে বিল বলে। আইন পাশ করানোর জন্য সংসদে প্রতিটি প্রস্তাবকে বিল আকারে উত্থাপন করতে হয়।
বিল সংসদে পেশ হওয়ার পর, এটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। তারপর, সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে বিলটি পাশ হয়। বিল পাশ হওয়ার পর তা আইনে পরিণত।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদে বিল সম্পর্কে বলা আছে। যেমন,
আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে যেসব প্রস্তাব তোলা হয় এমন প্রত্যেকটি প্রস্তাবকে বিল আকারে উপস্থাপন করতে হবে। সংসদে আলাপ-আলোচনার পর, বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গৃহীত হলে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য তাঁর নিকট পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বিলটি সংসদের আইন বলে অভিহিত হবে।
বিল কত প্রকার ও কি কি
বিল প্রথমত তিন প্রকার যেমন সাধারণ বিল, অর্থ বিল ও আর্থিক বিল। সাধারণ বিল আবার ২ প্রকার যেমন সরকারি বিল এবং বেসরকারি বিল।
১. সরকারি বিল
যে বিল কোন মন্ত্রী কর্তৃক সংসদে উত্থাপিত হয় তাকে সরকারি বিল বলে। সরকারি বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পূর্বে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি মোতাবেক সরকারী বিল উত্থাপনের জন্য মন্ত্রীকে বিল উত্থাপনের ৭ দিন পূর্বে সংসদ সচিবের কাছে নোটিশ প্রদান করতে হয়।
২. বেসরকারি বিল
কোন সংসদ সদস্য (সরকার দলীয়, বিরোধীদল, স্বতন্ত্র) কর্তৃক যে বিল সংসদে উত্থাপিত হয় তাকে বেসরকারি বিল বলে। বেসরকারী বিল উত্থাপনের আগে বিলের প্রতিলিপি সংসদে স্পীকারের নিকট নোটিশসহ প্রদান করতে হয়। এরপর, বিলটি সংসদে উত্থাপনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়।
অনুমতির পর, বিলের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এবং শেষে ভোটের আয়োজন করা হয়। বিলের প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সম্মতি পেলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বিল উত্থাপন করতে চাইলে তাকে সংসদ সচিবের কাছে লিখিত নোটিশ দিতে হয়।
অর্থবিল
সরকার যদি দেশের উন্নয়নের জন্য কোন ঋণ গ্রহণ করেন এবং এই সম্পর্কিত কোন বিল সংসদে উত্থাপন করেন তখন সেই বিলকে ‘‘অর্থবিল বলে’’। যেমন, বাজেটের মধ্যে যে ঋণ থাকে তা একটি অর্থবিল। বাজেট একটি অর্থবিল।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮১(১) অনুসারে, অর্থবিল বলতে নিন্মলিখিত বিষয়সমূহের যেকোন একটি অথবা সবগুলোকেই বোঝাবে।
- কর আরোপ, নিয়ন্ত্রণ, রদবদল, মওকুফ বা রহিতকরণ।
- সরকারের ঋণগ্রহণ বা নিশ্চয়তা প্রদান।
- সংযুক্ত তহবিলের রক্ষাণাবেক্ষণ, ওই তহবিলে অর্থ প্রদান বা ওই তহবিল থেকে অর্থদান বা নির্দিষ্টকরণ।
- সংযুক্ত তহবিল কিংবা প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাবে অর্থপ্রাপ্তি সংক্রান্ত বা অনুরপ অর্থ রক্ষণাবেক্ষণ বা দান, কিংবা সরকারের হিসাব নিরীক্ষা।
বিল পাসের পদ্ধতি
সরকারি বা বেসরকারি কোন বিলকে আইনে পরিণত করতে সাধারণত ৫টি পর্যায় অতিক্রম করতে হয় যেমন, বিল উত্থাপন, প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ, কমিটি পর্যায়, তৃতীয় পাঠ এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি। তবে কোন বিল সংসদে উত্থাপন করার আগে বিলটির চুড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন, নীতি উন্নয়ন এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন করা লাগে।
বিলের একটি গ্রহণযোগ্য রূপ অর্জিত হলে, এটি সরকারের আনুষ্ঠানিক বিল হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রিসভা বিলটিকে অনুমোদনের সাথে সাথে পৃষ্ঠপোষক মন্ত্রণালয় এটিকে সংসদ সচিবালয়ে নিয়ে যায় এবং আইনী পর্ব শুরু হয়।
মন্ত্রী/সাংসদ কর্তৃক বিল উত্থাপন: কোন মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য কর্তৃক বিল উত্থাপন করা হয়। কোনো বিল সংসদে উপস্থাপন করাকে ফার্স্ট রিডিং বা প্রথম পাঠ বলা হয়।
দ্বিতীয় পাঠ: (প্রথম পাঠ শেষে, বিলটির বিশদ আলোচনার জন্য আরো একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়, যাকে বিলটির সেকেন্ড রিডিং বলা হয়।
কমিটির নিকট প্রেরণ: বিশদ আলোচনা পারে অথবা বিলটির জনমত যাচাই করার জন্য সেটি একটি স্থায়ী বা বাছাই কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়।
তৃতীয় পাঠ: প্রস্তাবকৃত বিলটির যাবতীয় ধারা, উপধারা বিবেচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণ ও বর্জনের জন্য সংসদে বিলটি তৃতীয় পাঠের অনুরোধ করবেন।
রাষ্ট্রপতির সম্মতি: রাষ্ট্রপতির নিকট ফেরিত বিলটি অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে সম্মতি দিলে তা আইনে পরিণত হবে। আর যদি কোন সংশোধনী দরকার হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি বিলটি ফেরত পাঠাবেন। সংসদ বিলটি পুনরায় পর্যালোচনা করবে। তবে, কোন কারণে রাষ্ট্রপতি যদি সম্মত দিতে অপারগ হয়, তাহলে বিলটি সরাসরি আইনে পরিণত হবে।
ধন্যবাদ ভাই।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link