স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে, পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে এদেশের ঘুমন্ত সাধারন জনগনের উপর হামলা চালিয়েছিল।

ঐরাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করার আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, মুজিব নগর সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র জারি করা হয়। নিম্মে স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হল।

স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য, azhar bd academy

স্বাধীনতার ঘোষণা কি?

স্বাধীনতার ঘোষণা (Declaration of Independence) হলো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা। এই ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশের জনগণকে আহবান জানান।


স্বাধীনতার ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করা এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন অর্জন। স্বাধীনতার ঘোষণার বাংলা অনুবাদটি বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

স্বাধীনতার ঘোষণার তারিখ: ২৬ মার্চ, ১৯৭১।
স্বাধীনতার ঘোষণার স্থান: ধানমন্ডি, ঢাকা।
স্বাধীনতার ঘোষণা করেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যম: ওয়্যারলেস।

স্বাধীনতার ঘোষণা

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইংরেজি ঘোষণাটি হলো:

“THIS MAY BE MY LAST MESSAGE, FROM TODAY BANGLADESH IS INDEPENDENT. I CALL UPON THE PEOPLE OF BANGLADESH WHEREVER YOU MIGHT BE AND WITH WHATEVER YOU HAVE, TO RESIST THE ARMY OF OCCUPATION TO THE LAST. YOUR FIGHT MUST GO ON UNTIL THE LAST SOLDIER OF THE PAKISTAN OCCUPATION ARMY IS EXPELLED FROM THE SOIL OF BANGLADESH AND FINAL VICTORY IS ACHIEVED.” - Sheikh Mujibur Rahman (March 26, 1971)

এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, যে যেখানে আছ, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। - শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ মার্চ ১৯৭১

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কি?

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (Proclamation of Independence) হলো ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারি করা একটি ঘোষণাপত্র। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১, ঘোষণাপত্রটি মুজিবনগর সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল। 


স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছেদ ঘোষণা এবং এই বিচ্ছেদের কারণ ব্যাখ্যা করা। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন এবং  ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেন অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম তফসিলে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এই ঘোষণায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণাবলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকার বৈধ বলে বিবেচিত হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও এই ঘোষণাপত্রটি সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর, যখন দেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হয়, তখন সংবিধান হিসেবে এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়: ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়: ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্থান: মেহেরপুর, কুষ্টিয়া (মুজিবনগর)।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন: মুজিবনগর সরকার। 
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন: মুজিবনগর সরকার।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন: অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী
 

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

মুজিবনগর, বাংলাদেশ
তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১

যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত, বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; 


এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; 

এবং যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহবান করেন; 

এবং যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছাচার এবং বেআইনিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; 

এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; 

এবং যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান; 

এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; 

এবং যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্যা এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনা দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলেছে; 

এবং যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে; 

সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি,...........................

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন