গণহত্যার (genocide) সংজ্ঞা, উৎপত্তি

গণহত্যা "genocide" শব্দটি সর্বপ্রথম ১৯৪৪ সালে পোলিশ আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার রচনা Axis Rule in Occupied Europe তে ইহুদি, জিপসি, অক্ষম, অসুস্থ লোকের উপর জার্মান নাৎসি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও গণহত্যা বর্ণনা হয়েছিল।

লেমকিন জেনোসাইড (genocide) শব্দটি গ্রীক "genos" যার অর্থ জাতি বা উপজাতি এবং ল্যাটিন "caedere (cide)" যার অর্থ হত্যা, শব্দ দুটি একত্রিত করে "genocide" শব্দটি তৈরি করেছিলেন। সুতারাং জেনোসাইড শব্দের অর্থ হলো জাতি হত্যা।

লেমকিনের মতে, গণহত্যা মানে শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে দৈহিক নির্মূল করা না, বরং সেই গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সম্পদ, ভাষা, ধর্ম, জাতীয় আবেগ, সংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করাও বোঝায়।

১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যা একটি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হয়। ১৯৪৮ সালের গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশনে (গণহত্যা কনভেনশন) এটিকে একটি অপরাধ হিসাবে কোডিফাই করা হয়েছিল।

গণহত্যার উদাহরণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি বাহিনী ইহুদিদের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। হলোকাস্টের চেয়ে সাম্প্রতিকতম গণহত্যার একটি উদাহরণ হল ১৯৯০ এর দশকে রুয়ান্ডায় হুতু দ্বারা তুতসি জনগণকে হত্যা করা। গণহত্যার অন্যন্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়ার গণহত্যা, রুয়ান্ডা গণহত্যা, বুরুন্ডি গণহত্যা, বাংলাদেশ গনহত্যা, কম্বোডিয়া গণহত্যা এবং মিয়ানমার গণহত্যা।

গণহত্যার (genocide) সংজ্ঞা, উৎপত্তি, azhar bd academy

গণহত্যার সংজ্ঞা

জাতি, নৃতাত্তিক, ধর্ম বা বর্ণের কারণে একদল লোককে বা কোন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ইচ্ছাকৃত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধ্বংস করাকে গণহত্যা (genocide) বলে। 

রাফায়েল লেমকিন এর মতে,

‘‘গণহত্যা’ বলতে আমরা বুঝি একটি জাতি বা জাতিগোষ্ঠীর ধ্বংস। এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতীয় অনুভূতি, ধর্ম এবং জাতীয় গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অস্তিত্ব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য এবং মর্যাদা ধ্বংসের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মের একটি সমন্বিত পরিকল্পনাকে বোঝায়।’’

১৯৪৫ সালে তিনি আরও নির্দিষ্টভাবে লিখেছেন যে,
‘‘যে ব্যক্তি কোনো জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে এই ধরনের গোষ্ঠীর সদস্যদের জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে হামলা চালায়, সে গণহত্যার অপরাধে দোষী।’’

UNPG এর সংজ্ঞায় গণহত্যা,
১৯৪৮ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন (UNPG) নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রণয়ন করেছে।

গণহত্যা বলতে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে যে কোন একটি অপরাধ কোন জাতীয়, জাতিগত, ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত হয়েছে:
(ক) দলের সদস্যদের হত্যা করা।
(খ) গ্রুপের সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা।
(গ) ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শারীরিক ধ্বংস ঘটাতে  আঘাত করা।
(ঘ) গ্রুপের মধ্যে জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা।
(ঙ) গ্রুপের বাচ্চাদের জোর করে অন্য গ্রুপে স্থানান্তর করা।

পিটার ড্রস্টের (Pieter Drost) সংজ্ঞা (1959)
একজন ডাচ আইন অধ্যাপক গণহত্যাকে নিম্নরূপ সংজ্ঞায়িত করেছেন:

‘‘গণহত্যা হলো কোনো মানব সমষ্টির সদস্য হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র মানুষের শারীরিক জীবনকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা।’’

Vahakn N. Dadrian's সংজ্ঞা (1975)
আর্মেনিয়ান গণহত্যার একজন অগ্রণী চিন্তাবিদ এবং বিশেষজ্ঞ। তিনি গণহত্যাকে নিম্নরূপ সংজ্ঞায়িত করেছেন:

‘‘গণহত্যা হল একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সফল প্রচেষ্টা, যা আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্বের সাথে ন্যস্ত এবং ক্ষমতার সামগ্রিক সম্পদে প্রাধান্যের প্রবেশাধিকার সহ, জবরদস্তি বা প্রাণঘাতী সহিংসতার মাধ্যমে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস করা, যাদের চূড়ান্ত নির্মূল করা কাম্য এবং দরকারী।’’

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন