নয়া উপনিবেশবাদ
নব্য উপনিবেশবাদ (Neocolonialism) হলো পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের কৌশল। অর্থাৎ নয়া উপনিবেশবাদ হল পরোক্ষ উপায়ে উন্নত দেশ বা প্রাক্তন ঔপনিবেশ স্থাপনকারী দেশগুলো দ্বারা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ।
পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক পদ্ধতির মতো, এই ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ সামরিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা অপ্রত্যক্ষ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না। অর্থাৎ এটি এমন একটি অনুশীলন যেখানে আধিপত্য বিদ্যমান কিন্তু সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই।
১৯৫৬ সালে ফরাসি দার্শনিক জঁ-পল সার্ত্র (Neocolonialism) পরিভাষাটি উদ্ভাবন করলেও কোয়ামে এনক্রুমাহ এটি প্রথম ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, উন্নত দেশ এবং উপনিবেশ শক্তির উপর প্রাক্তন উপনিবেশগুলোর অব্যাহত নির্ভরতা বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, আফ্রো-এশীয় উপনিবেশগুলো একে একে স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে। ফলে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো উপনিবেশ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারা পরোক্ষভাবে তাদের অনুশাসন কায়েম রাখার ফন্দি আঁটতে থাকে।
উপনিবেশগুলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল। কেননা এসব দেশগুলোর মূলধন ও প্রযুক্তির অভাব লক্ষ্যণীয়। আর সে জন্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বহুজাতিক সংস্থার নানা শর্তের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
নয়া উপনিবেশবাদকে ব্যাপকভাবে পুঁজিবাদের বিকাশ হিসাবেও দেখা হয়ে থাকে যা পুঁজিবাদী শক্তি (দেশ এবং সংস্থা) সরাসরি শাসনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে জাতিগুলোর উপর কর্তৃত্ব করতে সক্ষম। বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যন্য বহুজাতিক কর্পোরেশন নব্য উপনিবেশিকরনে কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন।
উদাহরণস্বরূপ, একটি দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশের কিছু অর্থের প্রয়োজন যা একটি ধনী দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রদান করে। ফলস্বরুপ, ঋণের নামে ধনী দেশটি তার অর্থনীতি, রাজনীতি, বাণিজ্য নীতি এবং সাংস্কৃতিক অংশে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।
এটি দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়নের পরিবর্তে শোষণের জন্যও দায়বদ্ধ ছিল। নব্য উপনিবেশকরণ উন্নয়নশীল দেশে ঋণের নামে আরও অনুন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে কারণ সময়ের সাথে সাথে ঋণের সুদের হার বেড়ে যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link