আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of relativity) পদার্থবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এবং একই সাথে এটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব মহাবিশ্ব এবং প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের ধ্যান-ধারণাকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে চার-মাত্রিক স্থান-কাল" এবং স্থানকালে বক্রতার মতো নতুন ধারণাগুলিকে সামনে এনেছে।
সাধারণ বলবিদ্যা অনুযায়ী স্থান, কাল এবং ভরকে পরম বলে ধরা হয় কিন্তু বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন সর্বপ্রথম দাবী করেন যে, পরমস্থান, পরমকাল এবং পরমভর বলতে কিছুই নেই। স্থান,কাল এবং ভর তিনটিকেই আপেক্ষিক ধরে, তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন।
আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে স্থান, কাল ও ভর পরম কিছু নয়, বরং আপেক্ষিক। আইনস্টাইনের এই তত্ত্বকে আপেক্ষিক তত্ত্ব বলা হয়। ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (special theory of relativity) প্রবর্তনের মাধ্যমে এই তত্ত্বের সূচনা করেন। তিনি ১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (general theory of relativity) প্রকাশ করেন।
সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে মাধ্যাকর্ষণ স্থানকালে বক্রতার সৃষ্টি করে। এই বক্রতা আশেপাশের বস্তুর গতিকে প্রভাবিত করে। আবার বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে একটি গতিশীল কাঠামোতে সময় স্থির কাঠামোর তুলনায় ধীরে চলে। এভাবেই মাধ্যাকর্ষণ সময়কে প্রভাবিত করে। ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি স্থানে বস্তুর বেগ অনেক হওয়ায় সময় সেখানে ধীর মনে হবে।
উদাহরণ
মনে করুন, আপনি একটি চলন্ত ট্রেনের জানালার ধারে বসে আছেন। আপনার ট্রেনটি ৭০ কিমি/ঘন্টা গতিবেগে স্টেশন অতিক্রম করছে। পাশের লাইনে বিপরীত দিক থেকে একটি মালবাহী ট্রেন ৩০ কিমি/ঘন্টা গতিবেগ নিয়ে ছুটে আসছে। এখন প্রশ্ন হল আপনার কাছে মালবাহী ট্রেনের গতিবেগ কত?
যেহেতু, দুটি ট্রেনের গতি পরস্পরের বিপরীত, তাই মালবাহী ট্রেনের গতিবেগের সঙ্গে আপনার ট্রেনের গতিবেগ ও যোগ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার কাছে মালবাহী ট্রেনের গতিবেগ হবে (৭০+ ৩০)= ১০০ কিমি/ঘন্টা। কিন্তু স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন ব্যক্তির কাছে মালবাহী ট্রেনটির গতিবেগ ৭০ কিমি/ঘন্টা হবে। এই থেকে বোঝা যায় যে আপেক্ষিকতা বিষয়টি সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভরশীল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link