বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তির নাম হল নিউরালিংক, যেটি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন। নিউরালিংক মূলত প্রযুক্তির সাথে মানব মস্তিস্কের সংযোগ তৈরি করার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে। নিউরালিংক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাবে বিশ্বাস করা হয়। এটি মানব মস্তিকের বিভিন্ন জটিল ও অসাধ্য কাজ সম্পদানে অবদান রাখবে।
এই আর্টিকেলে, নিউরালিংক কি?, নিউরালিংক কিভাবে কাজ করে এবং নিউরালিংকের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
নিউরালিংক কি?
নিউরালিংক (Neuralink) হল এক ধরনের মাইক্রো চিপ বা ডিভাইস যা মূলত ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি মানব মস্তিষ্ককে সরাসরি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিতে পারে। ফলে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ড ছাড়াই শুধু চিন্তা করে কম্পিউটারের মতো ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আমেরিকার প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক ব্রেন কন্ট্রোল ইন্টারফেস স্টার্টআপ (Brain Control Interfaces startup) নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এমন একটি চিপ যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা যায় এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের যাবতীয় কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করা হয়।
নিউরালিংক চিপটি প্রায় একটি মুদ্রার আকারের। এটি নিউরোসার্জন দ্বারা রোবোটিক্স ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কে প্রবেশ করানো হবে। এই পদ্ধতিতে, লিংক নামক একটি চিপসেট মাথার খুলিতে বসানো হয়।
নিউরালিংক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিভিন্ন প্রাণীর উপর পরীক্ষা পরিচালনা করছে। সম্প্রতি ২৫ এপ্রিল ২০২৩, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) মানুষের মধ্যে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য অনুমতি দেয়। যদিও তারা এখনই এই পরীক্ষার জন্য কোনো অংশগ্রহণকারীকে নিয়োগ দেবে না।
নিউরালিংক কিভাবে কাজ করে?
নিউরালিংকের চিপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এগুলো মস্তিষ্কের সংকেতগুলোকে যথাযথভাবে বুঝে ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসে পাঠাতে পারে।
নিউরালিংক মানুষের মস্তিষ্কে বসানো একটি চিপের সাহায্যে কাজ করবে। চিপটি একটি ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং ব্লুটুথের সাহায্যে মস্তিষ্কের সংকেতগুলো যুক্ত থাকা ডিভাইসের সাহায্যে দেখা যাবে। আমরা যেসব ডিভাইস ব্যবহার করি, নিউরালিংকের চিপস সেসব ডিভাইসগুলোর সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ককে যুক্ত করবে।
চিপসগুলো আমাদের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রনিক সংকেতগুলোকে রিয়েল টাইমে সংগ্রহ করবে। তারপর সংকেতগুলোকে প্রসেস করবে এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসে প্রেরণ করবে। এর ফলে যার হাত অকেজো, তিনিও তার স্মার্টফোনটি চালাতে পারবেন। এই চিপের সাহায্যে মাউস বা কী-বোর্ডের কাজও করা যাবে। আগামীতে, প্যারালাইসিস বা হাত নাড়াতে পারেন না এমন যে কেউ মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে কম্পিউটার ও কী-বোর্ড চালাতে পারবেন।
নিউরালিংক এর কাজ
নিউরালিংক এর বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে যেমন,
- নিউরালিংক চিপ মানব মস্তিষ্ক এবং প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মস্তিষ্ক দিয়ে সহজেই তাদের ফোন এবং কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারবে।
- চিপসেটের তারগুলি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করতে এবং মস্তিষ্ককে বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপিত করতে সক্ষম হবে।
- এটি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে পারে।
- এটি স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার পরিচালনা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পারকিনসন এবং আলঝেইমারের মতো গুরুতর স্নায়বিক অবস্থার আরও ভাল অধ্যয়ন এবং চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নিউরালিংক ভবিষ্যতে মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগের সমাধান করতে পারে।
- এটি কম্পিউটারের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগ করে মানুষের দৃষ্টি এবং গতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
- নিউরালিংক প্যারালাইসিস এবং অন্ধত্বের মতো অবস্থার চিকিৎসা করতে এবং কিছু অক্ষম ব্যক্তিকে কম্পিউটার এবং মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সাহায্য করার আশা করে৷
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link