শক্তি বলতে বোঝায় কাজ করার ক্ষমতা। শক্তি বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান থাকতে পারে, যেমন তাপ শক্তি, গতিশক্তি, আলোকশক্তি ইত্যাদি। এই শক্তিসমূহ সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না শুধুমাত্র এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করা যায়। এই আর্টিকেলে, শক্তির সংজ্ঞা, প্রকার ও শক্তির বিভিন্ন রূপ, প্রকার এবং শক্তির শক্তির নিত্যতা সূত্র বা শক্তির সংরক্ষনশীলতার সূত্র সম্পর্কে বর্ণনা করা হল।
শক্তি কি?
পদার্থ বিজ্ঞানে, শক্তি(energy) বলতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝায়। শক্তি হচ্ছে পদার্থের এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। শক্তি শুধুমাত্র এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারে এবং এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে যেতে পারে।
মূলত শক্তি প্রয়োজন হয় কোন কিছু সরানো বা পরিবর্তন করতে। এই পরিবর্তনের সময়, শক্তি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় বা রূপ পরিবর্তন করে। শক্তি অনেক আকারে বিদ্যমান থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাপ হল এক প্রকার গতিশক্তি যা পদার্থের কণা উত্তপ্ত হওয়ার সময় কম্পনশীল গতিতে থাকে।
সুতরাং, সহজ কথায়, ‘শক্তি হল কাজ করার ক্ষমতা’। শক্তির SI একক হল জুল।
শক্তির রূপ
শক্তির বিভিন্ন রূপ বা প্রকার আছে। শক্তির প্রধান রূপগুলি হল:
- যান্ত্রিক শক্তি
- তাপ শক্তি
- আলোক শক্তি
- চৌম্বক শক্তি
- তড়িৎ শক্তি
- পারমাণবিক শক্তি
- শব্দ শক্তি
- রাসায়নিক শক্তি
- সৌর শক্তি
১. যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical Energy):
যান্ত্রিক শক্তি হলো সেই শক্তি, যা কোনো বস্তু তার স্থির অবস্থান বা গতিশীল অবস্থার জন্য লাভ করে। যেমন, জল যখন উঁচু স্থান থেকে নীচে নামতে থাকে, তখন যান্ত্রিক শক্তি লাভ করে।
২. তাপশক্তি (Thermal Energy):
তাপ এক প্রকার শক্তি। তাপের সাহায্যে অনেক রকমের কাজ করা যায়। যেমন পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতি জ্বালানি পুড়িয়ে যে তাপ পাওয়া যায়, তা থেকে মোটর গাড়ি, এরোপ্লেন প্রভৃতি চালানো হয়।
৩. আলোক শক্তি (Light energy):
কোনো বস্তুর উপর সূর্যালোক বা তাপ পড়লে বস্তুটি উত্তপ্ত হয় এবং বস্তুটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তনে আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া আলোক শক্তি আমাদের চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জাগায়।
৪. তড়িৎ শক্তি (Electrical Energy):
তড়িৎ শক্তির সাহায্যে পাখা ঘোরানো হয়, আলো জ্বালানো হয়। তড়িৎ শক্তির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক মটর ঘুরিয়ে যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যায়।
৫. রাসায়নিক শক্তি (Chemical Energy):
রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। যেমন চুনে পানি মেশালে চুন ফুটতে শুরু করে এবং তাপ উৎপন্ন হয়। এখানে চুন ও পানির রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কলিচুন পাওয়া যায় এবং রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৬. পারমাণবিক শক্তি (Nuclear Energy):
পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ভাঙ্গার পর যে শক্তি পাওয়া যায় বা এর অভ্যন্তরে যে শক্তি সঞ্চিত থাকে, তাকে পারমাণবিক শক্তি বলে। মূলত পারমাণবিক বিভাজন ও সংযোজন প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক শক্তি উৎপন্ন হয়।
৭. শব্দ শক্তি (Sound Energy:
প্রচণ্ড শব্দে অনেক সময় জানলার কাচ ভেঙে যায়। শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্যই এরকম ঘটে।
৮. চৌম্বক শক্তি (Magnetic Energy):
একটি দণ্ড -চুম্বকের মেরুকে লোহার তৈরি একটি পিনের কাছে আনলে দেখা যায় যে, পিনটি চুম্বকটির মেরুর দিকে চলতে শুরু করেছে। অর্থাৎ, তখন চৌম্বক শক্তির ফলেই পিনে যান্ত্রিক শক্তির সৃষ্টি হয়।
৯. সৌরশক্তি (Solar Energy):
সূর্য হচ্ছে সকল শক্তির একমাত্র উৎস। আর সূর্য থেকে পাওয়া শক্তিই হল সৌরশক্তি। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি বা শর্করা কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link