পৃথিবীতে শক্তি আছে বলেই জীবজগত ও উদ্ভিদকূল বেঁচে রয়েছে। এই শক্তি দুটো উপায়ে পাওয়া যায়; একটি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস থেকে, অন্যটি অনবায়নযোগ্য শক্তি থেকে।আমাদের প্রকৃতিতে বেশিরভাগ শক্তির উৎসই অনবায়নযোগ্য যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ সম্পদ, এবং কয়লা ইত্যাদি। এইসব অনবায়নযোগ্য শক্তি সীমিত সম্পদ হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে।
এই আর্টিকেলে, আমরা অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসসমূহ, ব্যবহার ও উদাহরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অনবায়নযোগ্য শক্তি কি?
অ-নবায়নযোগ্য শক্তি (Non-renewable Energy) হলো এমন ধরনের শক্তি যা নবায়ন করা যায় না এবং ব্যবহারের সাথে সাথে এর মজুত কমতে থাকে এবং একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক যেসব জ্বালানি বা শক্তি আমরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করি, তার বেশিরভাগ শক্তির উৎসই অনবায়নযোগ্য। অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণের মধ্যে রয়েছে যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ সম্পদ, কয়লা এবং পারমাণবিক শক্তি।
অনবায়নযোগ্য শক্তিসমূহ সাধারণত মাটি বা খনি থেকে গ্যাস, তরল বা কঠিন আকারে আহরণ করা হয়। এই শক্তিসমূহ তৈরি হতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর লেগেছে। অ-নবায়নযোগ্য শক্তিসমূহ আধুনিক শিল্পায়নের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎস
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, কয়লা, জীবাশ্ম জ্বালানি, পারমাণবিক শক্তি, এবং অপরিশোধিত তেল।
১. প্রাকৃতিক গ্যাস:
প্রাকৃতিক গ্যাস ভূগর্ভ থেকে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৮০-৯০%) ,তাছাড়া অন্যান্য উপাদান ইথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৫-৯৯%।
সিএনজি (CNG) হল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা গ্যাস সিলিন্ডারে জমা করা হয়।
Liquefied Petrolium Gas (LPG) হল অধিক চাপে শীতলকৃত জ্বালানি গ্যাস যা রান্নার কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়।
২. কয়লা (Coal):
কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ হলো কয়লা যা ভূ-গর্ভে খনিতে পাওয়া যায়। এটি পাথরের মতো এক ধরণের শিলা যেটি খনিজ কয়লা নামে পরিচিত। প্রাচীনকালের বৃক্ষ দীর্ঘদিন মাটির তলায় চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে কয়লায় কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার মানও বৃদ্ধি পায়।
৩. খনিজ তেল:
অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। স্ফুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশে মধ্যে পেট্রোল (গ্যাসোলিন), ডিজেল তেল, কেরোসিন, প্যারাফিন, ন্যাপথালিন, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
৪. পারমাণবিক শক্তি:
পারমাণবিক শক্তি পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে আসে। পারমাণবিক ফিউশন (নিউক্লিয়াস একত্রে মিশ্রিত হয়) বা নিউক্লিয়াস ফিশন (নিউক্লিয়াস বিভক্ত হয়) দ্বারা শক্তি নির্গত হয়। পারমাণবিক প্লান্ট ইউরেনিয়াম নামক একটি তেজস্ক্রিয় উপাদানের পারমাণবিক বিভাজন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link