বর্তমানে, প্রযুক্তি দুনিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আপনি যদি ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করতে চান, তবে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য সঠিক মাধ্যম।
ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম সুবিধা হল কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থায়ী না থেকে নিজের মত স্বাধীনভাবে কাজ করা।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি দ্বারা কন্ট্রাক্ট-ভিত্তিক কাজকে বোঝানো হয়। ফ্রিল্যান্সিং-এ ব্যক্তি নিজেই তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ক্লায়েন্ট বা কোম্পানীকে সার্ভিস প্রদান করে থাকেন।
এই আর্টিকেলে, আমরা জানব ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে শিখবো, ফ্রিল্যান্সিং কাজ সমূহ ও মার্কেটপ্লেস, এবং ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা-অসুবিধা।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হল একটি চুক্তি ভিত্তিক পেশা যেখানে ব্যক্তি তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার অনলাইনে বিভিন্ন ক্লায়েন্ট অথবা কোম্পানীকে পরিষেবা প্রদান করে। সহজভাবে বলতে গেল, ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে ব্যক্তি তার অর্জিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার অনলাইনে বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে পরিষেবা প্রদান করে অর্থ আয় করে।
ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম সুবিধা হল, এখানে ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থায়ী না থেকে, নিজের মত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই, আপনার বাড়িই হচ্ছে আপনার অফিস।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে কোন ধরাবাঁধা টাইম পেরিয়ড নেই, আপনি যখন ইচ্ছা করতে পারবেন। আপনি ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন।আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে, তবে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি টাকা আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সার কে?
সহজভাবে বলতে গেলে, যিনি ফ্রিল্যান্সিং-এ বিভিন্ন দেশের বায়ারের কাজ করে অনলাইনে অর্থ আয় করেন, তাকে ফ্রিল্যান্সার বলে। ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেমন Fiverr, 99designs, ইত্যাদি এবং সরাসরি ক্লায়েন্টদের সেবা প্রদান করে।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, এই প্রশ্নটা প্রায় সবাই করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে কাজে আগ্রহ সব থেকে বেশি, সে কাজটি বেছে নিবেন।
যেমন ধরুন, আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design) সেক্টরটি বেছে নিলেন। এই কাজটি ক্রিয়েটিভ মানুষরা করে থাকে। অথবা আপনি যদি ভালো টাইপিং পারেন, তাহলে কন্টেন্ট রাইটিং সেক্টরে প্রবেশ করতে পারেন। আপনি যদিও ভিডিও এডিটিং ভালো পারেন, তাহলে এটির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য নির্দিষ্ট সেক্টর বেছে নেওয়ার পূর্বেই, আপনি দেখবেন যে এই কাজটি আপনি কেমন পারছেন, কেমন আগ্রহ আপনার এই কাজের উপর। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য আপনি চাইলে নিজেই গুগল বা ইউটিউবে রিসোর্স খুঁজে সেখান থেকে দেখে দেখে শিখতে পারেন। এছাড়াও দেশ বিদেশে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স আছে, সেখান থেকেও শিখতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক আইটি প্রতিষ্ঠান নতুনদের ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখানোর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করে আসছে।
ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখার পরে আপনাকে প্রথমেই একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে একাউন্ট খুলতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় প্লাটফর্ম রয়েছে, যেমন Fiverr, Upwork, Freelancer, ইত্যাদি।
একাউন্ট খোলার পর, সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। আপনার দক্ষতা এবং কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে। এর পরে শুধু কাজের অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং জগতে শত শত কাজ রয়েছে। তবে কিছু দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিং জগতে ব্যাপক জনপ্রিয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং স্কিল বা কাজসমুহ হল—
- ওয়েব ডেভলপিং / কোডিং
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- কন্টেন্ট রাইটিং বা কপিরাইটিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ট্রান্সলেটশন বা অনুবাদ
- ভিডিও এডিটিং
- একাউন্টিং এবং ফাইন্যান্স
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- ডাটা এন্ট্রি
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- ভার্চয়াল সহকারী
- স্যোসাল মিডিয়া ম্যানেজার
- ভয়েস এক্টর
- কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
১. আয়ের একাধিক উৎস
আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেন, তখন আপনি কতটা উপার্জন করতে পারেন তার কোনও সীমা নেই। যার যত বেশি দক্ষতা, সে তত বেশি আয় করতে পারবে।
২. স্ব ব্যবস্থাপনা
আপনি কোন কাজটি করবেন কোনটি করবেন না, তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকবে। ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন ও মুক্ত পেশা যার বস একান্ত নিজেই।
৩. নমনীয় ঘন্টা
ফ্রিল্যান্সিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হল যে আপনি বেছে নিতে পারেন কোন কাজের ঘন্টা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো। আপনি চাইলে রাত ১২ টা থেকেও করতে পারেন, বা ভোর ৫টা থেকে। প্রথাগত চাকরিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টব কর্মঘন্টা থাকে কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এ কোন বাধাধরা সময় নেই।
৪. যেকোন স্থানে বসে কাজ করার সুযোগ
একজন ফ্রিল্যান্সার কার্যত বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন। আপনি যেখানে চান আপনার ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারেন।
৫. হোম বেনিফিট থেকে কাজ
যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার অফিসে যেতে হয় না, তাই যাতায়াতের সময়, ট্রাফিক জ্যাম, পোশাক এবং খাবারের খরচ এবং অন্যান্য প্রথাগত অফিসের বিরক্তিকর বিষয়গুলি এড়াতে পারেন।
৬. আর্থিক নিরাপত্তা
ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম সেরা সুবিধা হল আপনার আর্থিক নিরাপত্তা। একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ভালো চার্জ করতে পারে। কিছু কিছু ক্লায়েন্ট অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী কাজ করবে আপনার সাথে।
ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা
১. আয়ের অনিয়মিয়তা
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হন, তবে আপনি প্রতি মাসে অর্থ উপার্জন করবেন এমন কোন গ্যারান্টি নেই।
২. সুবিধার অভাব
একটি কোম্পানির কর্মীরা যেসব সুযোগ সুবিধা পায়. ফ্রিল্যান্সাররা সেরকম সুবিধা পান না।
৩. কাজের গ্যারান্টি নেই
আপনি হয়তো দীর্ঘদিন কোন কাজ নাও পেতে পারেন।
৪. দীর্ঘ সময় কাজ
একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে, আপনাকে সম্ভবত বাড়িতে বেশি সময় কাজ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি লিখছেন, তাহলে আপনাকে সম্ভবত জেগে থাকতে হবে এবং রাত পর্যন্ত কাজ করতে হবে।
৫. স্বাস্থ্য সমস্যা
দীর্ঘ সময় একটানা বসে থাকা এবং রাত জাগা, ভবিষ্যতে আপনার স্বাস্থ্য ঝুকিতে পেলতে পারে।
৬. ঝুঁকি
আপনি যদি কাজ না পান, বা আপনার কাজ যথেষ্ট ভাল না হয় তবে কী করবেন? আপনার নিয়মিত কাজ নাও থাকতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link