ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা

ক্রায়োসার্জারি কি?

ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) বা ক্রায়োথেরাপি হল এক ধরনের অস্ত্রোপচার যাতে টিউমারের মতো অস্বাভাবিক টিস্যু ধ্বংস করতে চরম ঠান্ডা তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। ক্রায়োসার্জারিতে  শীতলকারী পদার্থ হিসেবে সাধারণত তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়, তবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আর্গনও ব্যবহার করা যেতে পারে।

তরল নাইট্রোজেনের তাপমাত্রা -346 এবং -320 ° ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে, তখন এটি তাত্ক্ষণিকভাবে এটির সংস্পর্শে থাকা প্রায় সব কিছুকে হিমায়িত করে। প্রচণ্ড ঠান্ডার ফলে কোষের মধ্যে বরফের স্ফটিক তৈরি হয়, যার ফলে কোষ ধ্বংস হয়। এটি মানুষের আক্রান্ত টিস্যুর কোষকে ধ্বংস ও মেরে ফেলতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা, azhar bd academy

ক্রায়োসার্জারি শব্দটি গ্রিক শব্দ cryo (অর্থ বরফের মত ঠান্ডা) এবং surgery (অর্থ অস্ত্রচিকিৎসা) থেকে উদ্বুত। অতি শীতলীকরণ তরল পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের অসুস্থ বা অস্বাভাবিক টিস্যুকে ধ্বংস করার চিকিৎসা পদ্ধতিকে ক্রায়োসার্জারি বলে।

ক্রায়োসার্জারি কেন করা হয়?

ক্রায়োসার্জারি শরীরের আক্রান্ত টিস্যু ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন টিউমার, আঁচিল এবং ত্বকের ক্ষত ইত্যাদি। শরীরের কিছু অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যেমন লিভার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, পাইলস ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার প্রভূতি চিকিৎসায় ক্রয়োসার্জারি ব্যবহার করা হয়।

ক্রায়োসার্জারি প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য প্রাথমিক চিকিত্সা হিসাবেও ব্যবহৃত হয় যা প্রোস্টেটের মধ্যে থাকে। এছাড়া থেরাপি ব্যবহার করার পরে যখন ক্যান্সার ফিরে আসে তখন ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসার করা হয়।

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসার ব্যবহার

ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করার কিছু সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

১. ক্যান্সারের চিকিৎসা: ক্রায়োসার্জারি ত্বকের ক্যান্সার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

২. ত্বকের ক্ষত: আঁচিল, তিল, মেছতা এর মতো ত্বকের ক্ষত দূর করতে ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসার ব্যবহার করা হয়।

৩. লিভার এবং কিডনি টিউমার: লিভার এবং কিডনি টিউমারের চিকিৎসার জন্য ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা চ্যালেঞ্জিং বা সম্ভব নয়।

৪. চোখের চিকিৎসা: রেটিনাল টিয়ার বা চোখের ছানির মতো চিকিৎসার জন্য  ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. ব্যথা চিকিৎসা: ক্রায়োসার্জারি স্নায়ু-সম্পর্কিত ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার ক্ষেত্রে।


ক্রায়োসার্জারির সুবিধা

ক্রায়োসার্জারির কিছু প্রধান সুবিধা যেমন,
  • ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে  আক্রান্ত ব্যক্তির টিস্যুর প্রায় ৯০% ধ্বংস করা যায়।
  • অন্যান্য সার্জারির তুলনায় ক্রায়োসার্জারির খরচ কম।
  • এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্থান অনেক শীতল করার কারণে সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে রক্ত সরে গিয়ে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়। এরফলে রক্তপাত হয় না বললেই চলে।
  • চর্মরোগ, অনকোলজি, কার্ডিওলজি এবং গাইনোকোলজি সহ বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসায়  কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  • এটি সার্জারির চেয়ে কম কষ্টকর এবং রক্তক্ষরণ, ব্যথা ও অস্ত্রোপচারের অন্যান্য জটিলতা কমিয়ে আনে।
  • ক্রায়োসার্জারিতে প্রথাগত অস্ত্রোপচারের তুলনায় সুস্থ্য হতে কম সময় লাগে।

ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে যেমন,
  • গভীর টিস্যু বা বড় টিউমারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
  • ক্রায়োসার্জারি আশেপাশের স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকি থাকতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে, ক্রায়োসার্জারি সকল অস্বাভাবিক কোষকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পারে না, যা রোগের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনার দিকে পরিচালিত করে।
  • চিকিৎসা করা জায়গায় ব্যথা, ফোলাভাব বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে।
  • যেকোনো চিকিৎসা পদ্ধতির মতো, ক্রায়োসার্জারির সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন