ডিজিটাল মার্কেটিং কি? প্রকার, দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ

একটা সময় কোম্পানীগুলো ঐতিহ্যগতভাবে প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন এবং রেডিওর মাধ্যমে মার্কেটিং করত। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অগ্রগতি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা কোম্পানিগুলিকে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর উপায়ে পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং পণের প্রচার ও ব্র‌্যান্ড তৈরিতে মূখ্য ভূমিকা রাখছে।

বর্তমানে মানুষ ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে, তাই কোম্পানীগুলো তাদের পণ্য ও পরিষেবা বিক্রয় এবং প্রচার করতে বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে। যাইহোক, ডিজিটাল মার্কেটিং পণ্য ও পরিষেবার সঠিক গ্রাহক ও আগ্রহীদের কাছে পৌছাতে ভূমিকা রাখে।

এই আর্টিকেলে, আমরা আলোচনা করব一ডিজিটাল মার্কেটিং কি? এটি কিভাবে কাজ করে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকার, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং (digital marketing) হল পণ্য এবং পরিষেবা বাজারজাত করার জন্য ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যবহার। এটিকে অনলাইন মার্কেটিংও বলা হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং-এ সাধারণত ওয়েবসাইট, ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব-ভিত্তিক বিজ্ঞাপন, মাল্টিমিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট ও পণ্যের প্রচার করা হয়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুসারে, আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কদের ৭৫% এরও বেশি সাধারণত তাদের ফোন ব্যবহার করে কেনাকাটা করে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? প্রকার, দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ, ‍azhar bd academy

১৯৯০ এর দশকে ইন্টারনেটের আবির্ভাবের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ২০২৬ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এবং মার্কেটিং খাত $786.2 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একটা সময়, কোম্পানীগুলো ঐতিহ্যগতভাবে প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং রেডিওর মাধ্যমে মার্কেটিং করত। তবে, বর্তমানে প্রযুক্তির অগ্রগতি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা কোম্পানিগুলিকে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর উপায়ে পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং পণের প্রচার ও ব্র‌্যান্ড তৈরিতে মূখ্য ভূমিকা রাখছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে যেমন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন এবং অ্যাপস-এ গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া সহজেই পাওয়া যায়। এতে কোম্পানীগুলো তাদের পণ্য ও পরিষেবাগুলোর মান আরও উন্নত করতে বদ্ধপরিকর হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে, ফলে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের টার্গেট করা খুবই সহজ হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

নিম্নলিখিত ৭টি উপায় কোম্পানিগুলি তাদের পণ্য ও পরিষেবার মার্কেটিং করতে ব্যবহার করে।

১. ওয়েবসাইট মার্কেটিং (Website Marketing):

ওয়েবসাইট হল সমস্ত ডিজিটাল মার্কেটিং কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। এটি একটি খুব শক্তিশালী ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল। মার্কেটিং এর জন্য ওয়েবসাইট হতে হবে দ্রুত, মোবাইল-বান্ধব এবং সহজ ব্যবহার যোগ্য।

২. ক্লিক প্রতি পে বিজ্ঞাপন (Pay-Per-Click Advertising):

পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে পৌছানো যায়। মার্কেটাররা Google, Bing, LinkedIn, Twitter, Pinterest এবং Facebook-এ অনুসন্ধানকারী লোকেদের কাছে তাদের বিজ্ঞাপনগুলি দেখাতে পারে। পিপিসির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলি হল গুগল এডসেন্স এবং ফেসবুক এডস।

৩. কন্টেন্ট মার্কেটিং (Content Marketing):

কন্টেন্ট মার্কেটিং এর লক্ষ্য হল সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে কন্টেন্ট এর মাধ্যমে পৌঁছানো। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কন্টেন্ট বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা এমনকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্লগ, ইবুক, অনলাইন কোর্স, ইনফোগ্রাফিক্স, পডকাস্ট এবং ওয়েবিনার।

৪. ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing):

ইমেল মার্কেটিং এখনও সবচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেলগুলির মধ্যে একটি। ইমেইলের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে সহজেই পৌছানো যায়। কোম্পানীগুলো তাদের ব্র্যান্ড এবং পণ্যের প্রচারে ইমেল মার্কেটিং ব্যবহার করে। এতে খরচ নেই বললেই চলে।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social Media Marketing):

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করা এবং সামাজিক বিশ্বাস স্থাপন করা। কোম্পানীগুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বিক্রয় চ্যানেল হিসাবে ব্যবহার করে তাদের পণ্যের প্রচার করে থাকে। স্পনসরড পোস্ট এবং টুইট সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর দুটি উদাহরণ।

৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing):

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল মার্কেটিং এর প্রাচীনতম মাধ্যমগুলোর মধ্যে একটি, যেটিকে ইন্টারনেট নতুন জীবন দিয়েছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানীর পণ্যের প্রচার করা হয়। অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে প্রতিবার যখন বিক্রি হয়, তখন প্রচারকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং পদ্ধতিতে ব্যবসা করার সুপরিচিত কোম্পানির মধ্যে রয়েছে Amazon।

৭. ভিডিও মার্কেটিং (Video Marketing):

ইউটিউব বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, সেই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং পণ্যের রিভিউ দেখতে YouTube-এ আসেন।

মার্কেটাররা ভিডিও মার্কেটিং এর জন্য YouTube, Facebook, Instagram এবং TikTok সহ বেশ কয়েকটি ভিডিও মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • স্থানীয়ভাবে ও বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ: ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কোম্পানীর পণ্য ও পরিষেবা সারা বিশ্বে এবং স্থানীয়ভাবে একই বিজ্ঞাপনে দেখানো যায়।
  • নির্দিষ্ট গ্রাহকদের টার্গেট করা: ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ইমেল বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের টার্গেট করে পণ্য অফার করতে পারে।
  • খরচ-সাশ্রয়: প্রথাগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং কম ব্যয়বহুল। এছাড়া ইমেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্যের প্রচারে কোন খরচও করতে হয় না।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ

ডিজিটাল মার্কেটিং এর নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জ সমূহ রয়েছে:

  • প্রতিযোগিতামূলক: ইন্টারনেটের অগ্রগতির কারণে কোম্পানীগুলো এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ দেওয়া শুরু করেছে। ফলে বিজ্ঞাপনে প্রতিযোগীতা বেড়ে গেছে।
  • তথ্যের গোপনীয়তা: যদি কোনও সংস্থা বিজ্ঞাপনের জন্য কোনও ব্যক্তির ডেটা ব্যবহার করে, তাহলে সেই ডেটার সঠিক পরিচালনা এবং ডেটার গোপনীয়তা আইন অনুসরণ করতে হবে।
  • প্রযুক্তি: ডিজিটাল মার্কেটিং-এ বিজ্ঞাপন দেওয়া ওয়েবসাইটগুলি অবশ্যই মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে, যাতে গ্রাহকেরা বিজ্ঞাপনে দেওয়া পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে।
  • সময় সাপেক্ষ: ডিজিটাল মার্কেটিং-এ নিয়মিত কন্টেন্ট লেখা এবং মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কাস্টমাইজ করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।


ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত আরো তথ্য


১. ডিজিটাল মার্কেটিং এ কি কি দক্ষতা প্রয়োজন?
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ভালো কন্টেন্ট লিখতে পারা, যোগাযোগের দক্ষতা, এবং ডেটা বিশ্লেষণ দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সেইসাথে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন দক্ষতাও জানা আবশ্যক। এছাড়া সৃজনশীলতা, এসসিও জ্ঞান, এবং ডিজাইন দক্ষতা থাকা প্রয়োজন

২. ডিজিটাল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ডিজিটাল মার্কেটিং-এ পণ্য ও পরিষেবাগুলো সবচেয়ে বেশি শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। ফলে আপনার পণ্য বা পরিষেবা কেনার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। উপরন্তু, এটি ঐতিহ্যগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী হয়।

৩. ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হল একটি ফার্ম যা ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে মার্কেটিং ক্ষেত্রে একচেটিয়াভাবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, ভিডিও এবং ওয়েবসাইট।

৪. ডিজিটাল মার্কেটিং এ এসইও কি?
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO) হল এমন একটি উপায় যা ওয়েবসাইটগুলিতে ট্র্যাফিক বাড়াতে সাহার্য্য করে। সঠিকভাবে এ এসইও করতে জানলে, সার্চ ইঞ্জিনে কোম্পানীর নাম ও পণ্য আরও বেশি গ্রাহকদের কাছে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

৫. ইন্টারনেট মার্কেটিং কি?
ইন্টারনেট মার্কেটিং হল একটি মার্কেটিং যা শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ইন্টারনেট মার্কেটিং সাধারণত স্মার্টফোন, ডিজিটাল ডিভাইস এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হতে পারে।

৬. আমি কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারি?
ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ডেটা বিশ্লেষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার জানা প্রয়োজন। বেশিরভাগ ডিজিটাল মার্কেটিং পদের জন্য একটি স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। আপনি চাইলে অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করতে পারেন।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন