সম্প্রতি আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরি থেকে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। আগ্নেয়গিরির আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে প্রচুর গলিত শিলা। চারপাশের আকাশ কমলা ও লাল রঙের ধোঁয়ায় ঢেকে যায়।
ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ১৮১৫ সালের মাউন্ট তামবোরার অগ্ন্যুৎপাতটি এখনও সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড রাখে।
অনেকেই হয়তো জানে না, এই আগ্নেয়গিরি আসলে কী? এটি কিভাবে সৃষ্টি হয় ইত্যাদি। চলুন আজকের আলোচনায় জেনে নেওয়া যাক আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে।
আগ্নেয়গিরি কি?
আগ্নেয়গিরি (Volcano) হলো বিশেষ ধরনের একটি পাহাড় যার ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ও গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস থাকে। আগ্নেয়গিরি থেকে ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ও গলিত পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্ন্যুৎপাত। এটি একটি প্রাকৃতি ঘটনা।
পৃথিবীতে যতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে তার ৬০ ভাগ টেকটোনিক প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত। যদিও অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি একটি বেল্ট বরাবর পাওয়া যায়, যাকে "রিং অফ ফায়ার" বলা হয় যেটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত।
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে মানুষ মারা যেতে পারে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বন্যা, কাদা ধস, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পানীয় জলের দূষণ এবং দাবানল এর মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কিছু সুবিধাও রয়েছে, যেমন সবচেয়ে উর্বর মৃত্তিকা তৈরি করে, যার মাধ্যমে চাষাবাদে প্রচুর খাদ্য উৎপন্ন হয়।
আগ্নেয়গিরি কত প্রকার?
আগ্নেয়গিরিকে প্ৰধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়- যথা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, সুপ্ত বা নিস্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি এবং লুপ্ত আগ্নেয়গিরি।
১. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Active Volcano)- যেসব আগ্নেয়গিরির মুখ নিয়মিতভাবে ধোঁয়া, ছাই,গলিত লাভা, এবং গ্যাস থাকে, সেসকল আগ্নেয়গিরিকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে।
২. সুপ্ত বা নিস্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Dorment Volcano) - যেসকল আগ্নেয়গিরি পূর্বে উদগীরণ হয়েছিল, কিন্তু বৰ্তমানে সক্ৰিয় অবস্থায় নেই ,কিন্তু যেকোন সময় উদ্গীরণ হবার সম্ভাবনা আছে, সেসব আগ্নেয়গিরিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে।
৩. লুপ্ত আগ্নেয়গিরি (Extinct Volcano)- যেসব আগ্নেয়গিরি কোন এক সময় জাগ্ৰত ছিল কিন্তু ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাত হবার কোনো সম্ভাবনা নাই, সেসকল আগ্নেয়গিরিকে লুপ্ত বা মৃত আগ্নেয়গিরি বলা হয়।
আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়?
পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তর এতই উত্তপ্ত যে কিছু শিলা ধীরে ধীরে গলে যায় এবং ম্যাগমা নামক ঘন প্রবাহিত পদার্থে পরিণত হয়। যেহেতু এটি চারপাশের কঠিন শিলা থেকে হালকা, তাই ম্যাগমা উপরে উঠে যায়, এই ওঠে যাওয়াকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বলা হয়।
আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির আরো একটা কারণ হচ্ছে ভূগর্ভে থাকা জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য বাষ্পের প্ৰচণ্ড চাপ।
ভূ-অভ্যন্তরের তেজষ্ক্ৰিয় পদার্থ যেমন - রেডিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদির অবিরাম তাপ বিকিরণের ফলে ভূগৰ্ভের উত্তাপ বাড়ে ও বিভিন্ন উপাদানসমূহ তরল হলে আয়তন বাড়ে। ফলে কোনো সুড়ঙ্গ বা ফাঁটল দিয়ে এই উত্তপ্ত পদাৰ্থসমূহ পৃথিবী পৃষ্ঠে উঠে আসে। আর এভাবেই আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীতে কয়টি আগ্নেয়গিরি আছে?
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩৫০টি সম্ভাব্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not enter any harmful link