ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয় ও করণীয়

ভূমিকম্প একটি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার ফলে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি হয়। সম্প্রতি ২ ডিসেম্বর ২০২৩, বাংলাদেশে একটি ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হয়। কিন্তু এই ভূমিকম্প আসলে কী? কেন হয় এটা আমরা অনেকেই জানি না। আজকের আর্টিকেলে ভূমিকম্প কী? ভূমিকম্প কেন হয় ও ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় কি, এই বিষয়সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করব।

ভূমিকম্প কি

সংক্ষেপে ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমি বা মাটির কম্পন। আমাদের পৃথিবীর ভূ্ত্বক অসংখ্য টেকটোনিক নামক প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত গতিশীল। যখন দুটি টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষ বা পিছলে যায়, তখন সেখানে প্রচুর চাপ এবং ঘর্ষণ তৈরি হয়। যার ফলে প্লেটের সীমানা বরাবর শিলা ভেঙে যায় এবং পিছলে যায়। 

সঞ্চিত শক্তির এই আকস্মিক মুক্তির ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ কম্পিত হয়; এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।

ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয় ও করণীয়, azhar bd academy

সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে খুবই কমসংখ্যক কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভবও করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।


ভূমিকম্পের ফলে কখনো উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়। আবার কখনো সমুদ্রের তলদেশের কোনো স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রে দ্বীপের সৃষ্টি করে। ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে ভূ-পৃষ্ঠে অনুভূমিক পার্শ্বচাপের প্রভাবে কুঁচকে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ধস নেমে নদীর গতি রোধ করে হ্রদের সৃষ্টি হয়।

ভূমিকম্পের কারণ কী?

পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে আকস্মিক টেকটোনিক গতিবিধির কারণে ভূমিকম্প হয়। পৃথিবীর ভূত্বক টেকটোনিক প্লেট নামক বৃহৎ অংশে বিভক্ত। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত গতিশীল, যদিও খুব ধীরে। যখন দুটি টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষ বা পিছলে যায়, তখন প্রচুর চাপ এবং ঘর্ষণ তৈরি হয়। যার ফলে প্লেটের সীমানা বরাবর শিলা ভেঙে যায় এবং পিছলে যায়। সঞ্চিত শক্তির এই আকস্মিক মুক্তি সিসমিক তরঙ্গ তৈরি করে, যার ফলে ভূমিকম্প হয়।

টেকটোনিক গতিবিধি ছাড়াও, অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপও ভূমিকম্পের সূত্রপাত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে যখন ম্যাগমা পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্য দিয়ে উত্থিত হয়।

এছাড়া ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থে নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও ভূমিকম্প হয়ে থাকতে পারে। 

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

ভূমিকম্প হলে দ্রুত চিন্তাভাবনা এবং যথাযথ পদক্ষেপ জীবন বাঁচাতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া হল:

১. বাসার ভিতরেই থাকুন
ঝাঁকুনি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির ভিতরে থাকুন। একটি মজবুত টেবিল বা খাটের নীচে  অবস্থান করুন।

২. বিপজ্জনক এলাকা এড়িয়ে চলুন
ভারী আসবাবপত্র এবং যন্ত্রপাতি যা ভূমিকম্পের সময় ভেঙে পড়তে পারে তা থেকে দূরে থাকুন।

৩. একটি নিরাপদ স্পট খুঁজুন
বাসার অভ্যন্তরে থাকলে একটি মজবুত টেবিল বা খাটের নীচে অবস্থান করুন। স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমাতে শক্ত কিছু ধরে রাখুন।

৪. বাইরে থাকলে, খোলা জায়গায় চলে যান
ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি বাইরে থাকেন, তাহলে বিল্ডিং, গাছ এবং বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে একটি পরিষ্কার জায়গা খুঁজুন।

৫. গাড়িতে থাকলে সেখানেই থাকুন
ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।

৬. আফটার শকের জন্য অপেক্ষা করুন
একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয়, যাকে ‘আফটার শক’ বলে। নিজেকে বিপদমুক্ত ভাবতে অন্তত একঘণ্টা সময় নিন।

ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি

ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম ‘রিখটার স্কেল’। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা—৫ - ৫.৯৯ মাঝারি, ৬ - ৬.৯৯ তীব্র, ৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন